‘নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চাইতে গেলে ঘাড় ধরে বের করে দেবেন’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খান বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর যেই ভোট চাইতে যাবে, তাকে ঘাড় ধরে বাসা থেকে বের করে দিতে হবে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে মহান বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে এ কথা বলেন শামছুল আলম খান। তার এমন বক্তব্য নির্বাচনে সহিংসতা উসকে দেবে বলে মনে করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা।
বিজ্ঞাপন
৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড বক্তব্যের ওই ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে মঞ্চে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এফ এম জবির উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডি এম এনামুল হক, বাবলু দেওয়ান বসে আছেন। মঞ্চের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা চেয়ারে বসে বক্তব্য শুনছেন।
নওগাঁ-৩ আসনে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার ও প্রয়াত সংসদ সদস্য আকরাম হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী মাহফুজা চৌধুরী ওরফে মায়া।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে দেখা গেছে বক্তব্যের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে নৌকা দিয়েছেন। তিনি বদলগাছী-মহাদেবপুরের নৌকার কাণ্ডারি। আপনারা জানেন, বর্তমান এমপি সাহেব ছলিম উদ্দিন তরফদার। উনি কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, নৌকা না পেলে তিনি নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করবেন না। আজকে তিনি নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গেছেন। তার সঙ্গে আমাদের আকরাম হোসেন চৌধুরীর মিসেস মায়া চৌধুরীও প্রার্থী হয়েছেন। বলেন আপনারা, এটা কি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট, না মেম্বারের ভোট নাকি দুইজন এমপি হবে এক জায়গায়। এটা কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে শামছুল আলম বলেন, আপনাদের সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী দিয়েছেন, তাকে সম্মান জানানোর জন্য আপনাদের পরিশ্রম করতে হবে। কোনোভাবেই যাতে এই ছলিমের লোকজন মাঠে যেতে না পারে, মায়া চৌধুরীর লোকজন যাতে মাঠে যেতে না পারে। তারা বিভিন্ন পয়সাকড়ির কথা বলতেছে। উনি (ছলিম) ১০ বছরে এমন টাকার মালিক হয়ে গেছেন, মনে হয় গোটা বাংলাদেশ কিনে নেবেন। ওনার লোকজন বলতেছে, পার ভোট পাঁচ হাজার টাকা লাগলেও তা কিনে নেবে। আপনারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশের ভবিষ্যৎ। আপনাদের এই পবিত্র ভোট লাখ টাকার বিনিময়েও বিক্রি করা যায় না। অখাদ্য প্রার্থীকে কিন্তু ভোট দেওয়া যায় না।
শামছুল আলম আরও বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে ওনাকে বলতে চাই, ওনারা দুজন প্রার্থী যদি নির্বাচন থেকে সরে না বসেন, ইনশাআল্লাহ বদলগাছি-মহাদেবপুরের মানুষ ওনাদের জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করবেন, আপনারা নিশ্চিত থাকেন। কারণ, এখানে কিন্তু দুইজন এমপি হবে না। বর্তমান এমপি সাহেব যেভাবে হুংকার মারছেন, ওনার কর্মীরা যেভাবে হুংকার মারছের তাতে আমি আপনাদের বলতে চাই, আগামী ৭ তারিখে এই নির্বাচনে আপনারা মুক্তিযোদ্ধাদের একটু ভূমিকা নিতে হবে। আপনারা এমনভাবে ভূমিকা নেন, এই দুই প্রার্থী যেখানে ভোট চাইতে যাবেন, তাকে ঘাড়ে হাত দিয়ে বের করে দেবেন বাড়ি থেকে।
শামছুল আলম এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বলেন, শামছুল আলম বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। গত দুই কমিটির আগের কমিটিতে শামছুল আলম কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
এবিষয়ে কথা বলতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদারের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজা চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জানামতে বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশিক্ষিত। শিক্ষার আলো না থাকায় তিনি এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা আমার সমর্থকদের মাঝে ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করতে প্রতিনিয়ত এসব করে যাচ্ছে। তাই শামসুল আলমের বিরুদ্ধে জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যটি অপ্রত্যাশিত ছিল। বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসারকে অবগত করা হয়েছে। তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে নওগাঁ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোলাম মওলার মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কল ধরেননি। পরে মেসেজের মাধ্যমে কল করার কারণ জানতে চান তিনি। এরপর মোবাইলে মেসেজে বিষয়টি জানালেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।
আরমান হোসেন রুমন/এএএ