ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করার দায়ে শোকজ পাওয়া ঠাকুরগাঁও-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন। 

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠন করা ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. লুৎফর রহমানের দপ্তরে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে শোকজের লিখিত জবাব দেন তিনি।

অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আলম বলেন, নৌকা প্রার্থী লিখিত জবাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, পরবর্তীতে তিনি আর কখনো এ রকম ঘটনা ঘটবেন না। তার লিখিত জবাব কমিশনে পাঠনো হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কমিশন থেকে নেওয়া হবে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে শোকজ করে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলে অনুসন্ধান কমিটি।

রমেশ চন্দ্র সেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি এবারো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নে পোকাতি সেন্টারহাটে নির্বাচনী জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। এসময় বিএনপির সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‌বিএনপির যে সমস্ত ভোটার রয়েছে তারা যেন ভোট দিতে যান। যদি ভোট দিতে না যান, আর যদি তারা সুবিধাভোগী হন, তাহলে তালিকা থেকে তাদের নাম কাটা যাবে। আমরা কিন্তু এক কথার লোক। আমি দিয়েছি, আমিই নাম কাটবো। আর যদি আপনারা যান, সেখানে সব সেন্টার কমিটির ছেলে থাকবে, সভাপতি-সম্পাদক থাকবে, তারা কিন্তু মার্ক করবে। প্রতি জনকে মার্ক করবে। যদি না যান, তাহলে কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রমেশ চন্দ্র সেনের এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির নজরে এলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।  

সেই নোটিশে বলা হয়, ‌‌‌‌‌‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি (রমেশ চন্দ্র সেন) ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। আপনি নির্বাচনী প্রচারণাকালে গত ২০ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নে পোকাতি সেন্টারহাটে নির্বাচনী জনসভায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন, যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।’

আরও বলা হয়, ‌আপনার (রমেশ চন্দ্র সেন) বক্তব্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৭৭(৩)(খ) অনুচ্ছেদ ও সংসদ নির্বাচনে  রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর ১১(ক) ধারার লঙ্ঘন। আইনভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, মর্মে আগামী ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

প্রসঙ্গত, ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে রমেশ চন্দ্র সেন (নৌকা) ছাড়াও জাতীয় পার্টির রেজাউর রা‌জি (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রা‌জিউল ইসলাম (আম) এবং ইসলা‌মী ঐক্যজোট প্রার্থী র‌ফিকুল ইসলাম (মিনার) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এই আসনে রমেশ চন্দ্র সেন ১৯৯৭ সালে উপনির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনের সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করার কারণে উপ-নির্বাচনটি হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালে তৃতীয়বার এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি ৪র্থ বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস