অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে প্রাণ হারাল চারজন
ময়মনসিংহে বলাকা কমিউটার ট্রেন আর ট্রাকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে একটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। সেখানে কোনো ব্যারিয়ার কিংবা গেটম্যান ছিল না।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাদের ধারণা, ট্রাক চালকের অসচেতনতায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, নেত্রকোণার জারিয়া রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেন যাচ্ছিল ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের দিকে। পথে শম্ভুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ের দুইশ গজ আগে চর রঘুরামপুর এলাকায় অরক্ষিত একটি লেভেল ক্রসিংয়ে হঠাৎ করে রেল লাইনে উঠে পড়ে বালুবাহী ট্রাক। এতে ট্রেন ও ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই দুমড়েমুচড়ে যায় ট্রাক ও ট্রেনের সামনের অংশ।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ঘটে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
রফিকুল ইসলাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই লেভেল ক্রসিংটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এখানে কোনো ব্যারিয়ারও নেই, গেটম্যানও নেই। ট্রাকচালক হয়ত ভেবেছিলেন তিনি রেললাইনটি পার হয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু লাইনে উঠতেই তিনি আটকে যান। পরে ট্রেন এসে ওই ট্রাকটিকে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে ফেলে।
এ ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, ট্রাকের চালক ত্রিশালের বৈলরের সজীব (২৬) ও নেত্রকোণার দুর্গাপুরের টিটু (২৬)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন। নিহত অন্য দুইজনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালায়। এ সময় ট্রাকের পাশ থেকে একজনের এবং ট্রেনের সামনের অংশে ঝুলে থাকা অবস্থায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন এসে বলাকা ট্রেনের বিকল ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন
উদ্ধার কাজ শেষে বিকেলে ছেড়ে গেছে দুর্ঘটনা কবলিত বলাকা কমিউটার ট্রেন। এতে দুই ঘণ্টা পর ময়মনসিংহের সঙ্গে নেত্রকোণা ও ভৈরব রেলপথ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
১০৫টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জোনের প্রায় ২০০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১০৫টিই অরক্ষিত।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আকরাম আলী বলেন, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, সিটি করপোরেশনসহ অনেকেই রেলের অনুমোদন না নিয়েই অবাধে রাস্তা নির্মাণ করে থাকে। এতে করে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো আমাদের নজরে এলে কিছু কিছু বন্ধ করে দিই, আবার অনেকগুলোতে সাইনবোর্ড টানিয়ে সতর্ক করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সুরক্ষিত বা স্বীকৃত লেভেল ক্রসিং যেগুলো, সেগুলোতেও লোকবল সংকট রয়েছে। তা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।
তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
উবায়দুল হক/এএএ