জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল ও কালাই) আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ওরফে বুলুর নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সিরাজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাতে জয়পুরহাট-২ আসনের অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. রাসেল মাহমুদ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।

হামলার ঘটনার পর গোলাম মাহফুজ চৌধুরী আহত হয়ে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া তার আরও চারজন কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে ওই ঘটনায় নৌকা প্রতীকের দুজন কর্মী আহত হয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় গণসংযোগ করছিলাম। আমার সঙ্গে ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদারসহ কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। আমরা গণসংযোগ শেষে ইটাখোলা বাজারের শ্রমিক অফিসে যাচ্ছিলাম। এ সময় পাশেই নৌকা প্রতীকের অফিস থেকে তাইফুল ইসলাম তালুকদার আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে নৌকা মার্কার কর্মী ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষেতলাল পৌরসভার সাবেক মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলুর নেতৃত্বে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাকে সড়কে ফেলে লাথি মারা হয়। আমার নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষার করার চেষ্টা করে। এ সময় আমার শরীরে থাকা মুজিব কোর্ট তারা ছিনিয়ে নেয়। ওই কোর্টে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিল এবং নির্বাচন কাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছিল। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। আমি শরীরে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এই হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই।

সিরাজুল ইসলাম বুলু বলেন, মাহফুজ চৌধুরী যেসব অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এখানে অফিসে সবসময় ছেলেরা থাকে। আমাদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নৌকা প্রতীকের কর্মী জুলফিকার আলী চৌধুরীকে দেখে ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার কটূক্তি করে তাকে ধাক্কা মারে। এরপর ওই কথাগুলো স্থানীয় ছেলেরা মেনে নিতে না পেরে উত্তেজিত হয়। আমরা দৌড়াদৌড়ি করে তা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। এখানে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি, ঠেলাঠেলি ছাড়া। তেমন কেউ আহতও হয়নি। বরং ওদের স্থানীয় ও বহিরাগতরা মিলে আমাদের দুজন নৌকার কর্মী জামাল উদ্দিন (৪৪) ও আবির হোসেনকে (৩৭) আহত করেছেন। তাদের ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ইটাখোলা বাজারে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনাসামনি শ্রমিক অফিস। মঙ্গলবার বিকেলে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করে ওই শ্রমিক অফিসে আসেন। এ সময় নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের কর্মীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিচ্ছিলেন। নৌকা প্রতীকের দিক থেকে কেউ কটূক্তিমূলক কথা বলেন। এরপর দুপক্ষ থেকেই কটুক্তিমূলক কথা বলা শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী হাতাহাতির ঘটনা থামাতে গিয়ে নিচে পড়ে যান। এ সময় তাকে লাথি ও কিল-ঘুষি মারা হয়। গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকে তার কর্মী-সমর্থকেরা উদ্ধার করেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, কটূক্তির জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী বাদী হয়ে ১০ জন নামীয়সহ অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর নৌকা প্রতীকের কর্মী জুলফিকার আলী চৌধুরী বাদী হয়ে ১৪ জন নামীয়সহ ১০-১২ জন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চম্পক কুমার/আরকে