‘এদের চিহ্নিত করে নির্বাচনের দিন চেঁচি দেবেন’
নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের চেঁচি (পিষে) ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ। সোমবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে কাদিরপুর ইউনিয়নে এক উঠান বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ বলেন, আজকে কাদিরপুর ইউনিয়নের গণসংযোগের শেষ দিন। সমাপনী দিনে আপনাদের বলছি কাদিরপুরের একটা লোক যদি ডান বাম করেন তাদের খেদাই (তাড়িয়ে) দেবেন। যেগুলো নৌকায় ভোট দেবে মনে করবেন তাদের কাদিরপুর থাকার অধিকার নাই। তাড়িয়ে দেবেন এখান থেকে। দুই একটা কালসাপ আছে। এদের চিহ্নিত করে নির্বাচনের দিন চেঁচি (পিষে) দেবেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ, কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ৪৩ সেকেন্ডের এই বক্তব্য নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কাদিরপুর ইউনিয়নের যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হাসান তার ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেন, তীব্র নিন্দা জানাই এমন বক্তব্যবের। কাদিরপুর ইউনিয়ন মনে হয় উনার নিজস্ব সম্পত্তি।
বিজ্ঞাপন
ঘটনাস্থলে থাকা কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ভিডিও বানোয়াট। পুরো তথ্য এখানে উঠে আসেনি। বিস্তারিত জানার জন্য আপনি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ সাহেবকে কল দিন। উনি আপনাকে বিস্তারিত বলবেন।
বক্তব্য জানতে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাবেদের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরনের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান আনসারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় আমরা তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা সভাপতি সাহেবের বহিষ্কারের সুপারিশ করব। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ জমা দেব।
ওই আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন জাফর উল্যাহ সাহেব। আমি উনার সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে তিনি কিভাবে নৌকার বিরুদ্ধে বলেন এটা আমার মাথায় আসে না। তিনি অত্যন্ত নোংরা ভাষায় কথা গুলো বলেছেন। আমি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালী-৩ আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মো. মামুনুর রশীদ কিরন (নৌকা), স্বতন্ত্র মিনহাজ আহমেদ (ট্রাক), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের মহি উদ্দিন (চাকা), জাতীয় পার্টির ফজলে এলাহী সোহাগ (লাঙ্গল), জাসদের জয়নাল আবেদিন (মশাল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের মো. সুমন আল হোসাইন ভূঁইয়া (ছড়ি)। ১৬ ইউনিয়নের এই আসনে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৪৯টি এবং মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭ জন।
হাসিব আল আমিন/আরকে