দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারেন, সেজন্য সততা, নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেছেন, ভোটাররা বাড়ি থেকে কেন্দ্রে এসে ভোট প্রয়োগ করবেন এবং ভোট প্রদান শেষে বাড়িতে ফিরবেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। ভোটারদের বাড়ি, কেন্দ্র ও রাস্তায় কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা কেউ সৃষ্টি করতে চাইলে তা প্রতিহত করার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডিআইজি রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে জেলার ছয়টি নির্বাচনী আসনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেন।

ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাকে শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে। এ সময় তিনি সব পুলিশ সদস্যদের নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।  

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকেও একটা নীতিমালা রয়েছে। আমি মনে করি সকল সাংবাদিককে এই নীতিমালা জেনে রাখা উচিত। ভোটের দিন কোথাও যেন সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এর জন্য তিনি সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান করেন।

ডিআইজি আরও বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো রকম দুর্ব্যবহার করবেন না। আপনাদের চোখে যদি মনে হয় সাংবাদিকরা নীতিমালার বাইরে কিছু করছেন, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা প্রিজাইডিং অফিসারকে জানাবেন। প্রিজাইডিং অফিসার বিষয়টি দেখবেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৮৫৮টি কেন্দ্র রয়েছে। রংপুর জেলার অধীনে রয়েছে ৬৫৯টি এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৯৯টি কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে রংপুর জেলার ৬৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১৯টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত টহল টিম থাকবে।

অন্যদিকে একই দিনে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার মাঠে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ফোর্সদের নির্বাচনী নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং করা হয়।

এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান পুলিশ সদস্যদেরকে সর্বোচ্চ মেধা, দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ এবং মহান দায়িত্বটি সুসম্পন্ন করাসহ তৎপরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানান।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশের আইজিপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও  শান্তিপূর্ণ করায় বদ্ধপরিকর। এ ঘোষণার সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রংপুর মহানগর এলাকার মোট ১৯৯টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরপিএমপির ১ হাজার ১১৪ জন, পিটিসি রংপুরের ৭৮ জন, এপিবিএন’র ১৫০ জন এবং শিল্প পুলিশের ১২২ জনসহ মোট ১ হাজার ৪৬৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা-ফোর্স এবং আনসার-ভিডিপির ২ হাজার ৩৮৮ জন সদস্য মহানগর এলাকার দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি আনসার ও পুলিশ একসঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সতর্কতা, ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২৪ জন ভোটার রয়েছে। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ১৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।

রংপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ কেন্দ্রে বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নির্বাচন কমিশন থেকে গাইডলাইন দেওয়া আছে। আমরা সেই গাইডলাইন ফলো করব। তা ছাড়া নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যা প্রয়োজন আমরা সবই করব, সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ