দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়ে দুই কূলই হারালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। 

নির্বাচনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস তার ঈগল প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ২৩৯ ভোটে হেরেছেন। নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি আব্দুল মমিন মন্ডল। এতে একদিকে লতিফ বিশ্বাস যেমন সংসদ সদস্য হতে পারেননি, তেমনই মাঝখান থেকে পদত্যাগ করে হারিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গত বছরের (২৮ নভেম্বর) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি উঠান বৈঠক, গণসংযোগ আর প্রচারণা করে নির্বাচনী মাঠ অনেকটা গরমও করেছিলেন। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৮-২০১৪ সালে দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। 

জানা যায়, তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস দীর্ঘদিন বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দুই বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে একই আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তিনি ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং ২১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। দলের ও সরকারের কোন দায়িত্ব না থাকলেও তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন। পরে ২০১৫ সালের (০৮ জানুয়ারি) জেলা আওয়ামী লীগের লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে দ্বিতীয় বারের মতো সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী বেগম আশানুর বিশ্বাস বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বর্তমানে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনে মমিন মন্ডল (নৌকা) পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬১ ভোট ও মো. আমিরুল ইসলাম খান (ধানের শীষ) পান ২৮ হাজার ৩১৭ ভোট।

আসনটি থেকে এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিল্পপতি আব্দুল মমিন মণ্ডল ৭৭ হাজার ৪২২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩ হাজার ১৮৩ ভোট।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনটি থেকে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- আব্দুল মমিন মন্ডল (নৌকা), আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (ঈগল), মেজর (অব:) আব্দুল্লাহ আল মামুন (কাঁচি), ফজলুল হক (লাঙ্গল), আব্দুল হাকিম (নোঙর) ও নাজমুল হক (গামছা)। এর মধ্যে আব্দুল হাকিম (নোঙর) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

শুভ কুমার ঘোষ/পিএইচ