শীতের তীব্রতা বেড়ে রাতের ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতল বাতাস বইছে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। এতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। তবে হাসপাতালে এসব রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বেশিরভাগ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ স্বজনদের। 

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবছর শীত বাড়লে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ মানুষ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। 

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোগীই শিশু ও বৃদ্ধ। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৮ জন শিশু। ভর্তি হওয়া এসব শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগীর স্বজনদের দাবি প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বেশিরভাগ পরীক্ষা করতে হয় হাসপাতালের বাইরে থেকে। 

ঠান্ডাজনিত কারণে বুকে কফ জমে যাওয়া ১১ মাস বয়সী শিশু আব্দুল্লাহকে নিয়ে হসপাতলে ভর্তি হয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার বড় লবণগোলা এলাকার মাসুরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার দিন ধরে বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। গ্যাস দিয়ে এখন মোটামুটি সুস্থ, পুরোপুরি সুস্থ হলে কয়েকদিন পরেই বাড়িতে চলে যাব। 

দুই বছর বয়সী অসুস্থ আরেক শিশু ফারহিন হাসপাতালে ভর্তি হলেও তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা হাসপাতালে করতে পারেননি স্বজনরা। ফারহিনের মা অন্যন্যা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাচ্চাকে ভর্তি করানোর পরে বাইরে থেকে টেস্ট করতে গিয়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখান থেকে পরীক্ষা করতে পারলে আমার অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা খরচ হতো না। তাহলে আমার পক্ষে চিকিৎসা করাতে আরও সুবিধা হতো।

বরগুনা পৌরসভার কেজি স্কুল সড়কের বাসিন্দা হৃদায় নামের এক রোগীর স্বজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু রোগীদের চিকিৎসার জন্য যারা আসে তাদেরকে প্রথমে যে কেনুলা পাড়াইতে হয় তাও হাসপাতালে নেই। বাইরে থেকে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা করে প্রতিটি কেনুলা কিনতে হয়। এছাড়া যে পরীক্ষা দেওয়া হয় তা হাসপাতালে হয় না। বাইরে থেকেই করতে হয়। এতে অনেক গরিব রোগীরা চিকিৎসা না নিয়েই বাড়িতে ফিরে যান। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সবসময় এখানে না থাকায় চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের বেগ পেতে হয় বলেও জানান তিনি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসাল্টেন্ড শিশু চিকিৎসক ডা. মেহেদী পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া ঠান্ডাজনিত কারণে দুইমাস থেকে দুই বছর বয়সী বাচ্চারা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। বাচ্চাদের নিরাপদে রাখতে গরম কাপড়, হাতে পায়ে মুজা সম্ভব হলে মাস্ক পরাতে পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম নজমুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ওষুধপত্র কিছুটা কম আছে। তবে সরকার থেকে যা সাপ্লাই আছে আমরা দিচ্ছি। মোটামুটিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে যতটুকু দেওয়া দরকার তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের এমএসআর এর টেন্ডার এখন শেষ পর্যায়ে, আমরা কার্যাদেশ দিয়ে দেব। আশা করি আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ওষুধের সংকট থাকবে না।

হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বছরে আমাদের টেন্ডার হয় একবার। একারণে গতবছরের যে পরীক্ষার কিট তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া বরগুনা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও ডেঙ্গুর কারণে চার থেকে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি ছিল হাসপাতালে। এ জন্য বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করতে হয়েছে। এতে আমাদের পরীক্ষার কিটগুলো শেষ পর্যায়ে থাকায় কিছুকিছু পরীক্ষা আমরা করতে পারছি না। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সব পেয়ে গেলে আমাদের আর কোনো সংকট থাকবে না।

আরকে