স্যালাইনের হাহাকার, সাহায্য চেয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো
নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা
ঝালকাঠিতে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। এছাড়া স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক পেজ থেকে সবার কাছে স্যালাইন প্রদানের সাহায্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় রাখারও জায়গা নেই। ভয়ের কথা হলো চিকিৎসা নিতে যে সব রোগী আসছেন, প্রায় সবাই তীব্র পানি স্বল্পতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এদের অধিকাংশ গরিব।
বিজ্ঞাপন
রোগীর সংখ্যা তীব্র আকার ধারণ করায় সরকারি আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্যালাইন প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে সবার কাছে অনুরোধ করেছে।
রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও স্থানীয় পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্যালাইন সংকটের জন্য সাহায্য চান।
এর পরপরই মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খাঁন পৌরসভার পক্ষে ৭০০ ও ব্যবসায়ী মাহফুজ খাঁন ১০০০ ব্যাগ আইভি স্যালাইন দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে স্বেচ্ছাসেবীদেরও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
কাঁঠালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। শনিবার বিকেল ৪টা থেকে রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪৭ জন ডায়রিয়া রোগীর ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়। সেখানেও দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট।
এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, এক মাসে জেলায় ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছন ১ হাজার ৪৬১ জন। এরমধ্যে গত সাত দিনে ৭০৭ ও ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নির্ধারিত ১৩ বেডে রোগীর সংকুলান না হওয়ায় অন্য ওয়ার্ড ও সব বারান্দার মেঝেতে রেখে স্যালাইন দিতে হচ্ছে রোগীদের। কেউ কেউ শুধু কলেরার স্যালাইন পুশ করেই বাসায় চলে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে সদর হাসপাতালেও ওষুধ ও স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মুনিবুর রহমান জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে আমরা যথাযথ চেষ্টা করছি। ইডিসিএল থেকে স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডা. সুমাইয়াও একই কথা জানান।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স সমাপ্তি মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়া রোগী আসছে তাতে ডাক্তার, নার্সসহ আয়াদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হন।
সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ডায়রিয়া আক্রান্তের হার অনেক বেশি। করোনা ও ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে ইতোমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ডাক্তার ও নার্সরা।
স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতির কথা স্বীকার করে সমাধানের চেষ্টার কথা জানান ডা. রতন কুমার ঢালী। সংকট থাকার কারণ হিসেবে ইডিসিএল থেকে কম উৎপাদন ও সরবরাহের কথা জানান তিনি।
ইসমাঈল হোসাঈন/এমএসআর