কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামে রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী জয়নবের লাশ আসবে জেনে এক নজর দেখার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন এলাকাবাসী।

দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পর জয়নবের লাশ গ্রামে আসার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাজুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। এ সময় আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। মেয়ের লাশ দেখে আহাজারি শুরু করেন জয়নবের বাবা ও মা। 

আহাজারি করতে করতেই জয়নবের মা বলেন, আহারে আমার মাকে শীতের পিঠা খাওয়াতে পারলাম না। আমাদের আশা ছিল মেয়েটি শিক্ষিত হয়ে বড় অফিসার হবে। কিন্তু আল্লাহ আমাদের সব স্বপ্ন-আশা ভেঙে চুরমার করে দিল।

এরপর দুপুর ২টায় রৌমারী কেরামতিয়া আদর্শ ফাযিল মাদরাসায় নামাজে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে জয়নবকে দাফন করা হয়।

জয়নব মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে। জলিল পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জয়নব সবার ছোট। তিনি উপজেলার সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রৌমারী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মেধাবী জয়নবের ইচ্ছে অনুয়ায়ী পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে ভর্তি করান।  

জয়নব খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। পড়ালেখার পাশাপাশি জয়নব ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমে সরব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিটের সদস্য, হিমু পরিবহনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ভ্রমণ কন্যার সদস্য ছিলেন। এছাড়া ভ্রমণ কন্যা- ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-এর সেরা ভলানটিয়ার এবং মুভার’স একটি সচেতনতামূলক সংগঠন যার শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রতিবেশী শিহাব খান বলেন, জয়নব খুবই মেধাবী ছিলেন। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার পরিবার তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত। দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুতে পরিবার খুবই ভেঙে পড়েছে। 

রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হীল জামান জানান, রৌমারীর মন্ডল পাড়া এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী জয়নবের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে বান্দরবান জেলা সদর থেকে ফেরার পথে রুমা উপজেলায় বগালেক-কেওক্রাডং সড়কের দার্জিলিং পাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ঢাবি ছাত্রী জয়নব মারা যান। আহত হন আরও ১২ জন।

জুয়েল রানা/এমএএস