ঘরে খাবার নেই। স্ত্রী-সন্তান না খেয়ে আছে। ক্ষুধার জ্বালায় রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি। রিকশা ছেড়ে দেন, না খেয়ে মারা যাব। আমাদের কী দোষ, ক্ষুধা তো লকডাউন মানে না।

এভাবেই কথাগুলো বললেন বরিশাল নগরীর রিকশাচালক শুক্কুর শেখ (৪৮)। সরকারঘোষিত লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নামার অপরাধে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকালে তার রিকশা উল্টে রাস্তার ওপর রেখে দেয় পুলিশ। দুই ঘণ্টা ধরে বারবার পুলিশকে রিকশা ছাড়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।

শুক্কুর শেখ বলেন, রাস্তায় মানুষ নেই। অনুরোধ করেও যাত্রীদের রিকশায় তুলতে পারি না। ঘরে চাল-ডাল কিছুই নেই। পেটের ক্ষুধায় বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পুলিশের হাতে আটক হলাম। স্ত্রী-সন্তান না খেয়ে আছে, রিকশা চালিয়ে বাজার নিয়ে গেলে রান্না হবে।

শুক্কুর শেখের মতো রাস্তার ওপর রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে মো. রফিকের। রিকশা ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন তিনিও।

সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে রিকশা আটক করে রাস্তায় উল্টে রাখে পুলিশ

রফিক বলেন, লকডাউন অমান্য করতে চাই না। কিন্তু পেটের ক্ষুধায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা কোথায় যাব, কে দেবে খাবার? আমাদের জন্য সরকার কিছুই করে না। না খেয়ে মরতে হবে। লকডাউনে সব নির্যাতন আমাদের ওপর। অথচ রাস্তায় বড় বড় গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলছে।

নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে রিকশা আটক করে পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিকশা ছেড়ে দেয় পুলিশ।

রিকশাচালকরা অভিযোগ করেছেন, আটকের পর উল্টে রাখায় রিকশার হুড ভেঙে গেছে। অনেকের রিকশার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ মারধরের শিকার হয়েছেন।

সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে রিকশা আটক করে পুলিশ

রিকশাশ্রমিকদের অভিযোগ, প্রথম দফার লকডাউনে অনাহারে ছিলেন। ধার-কর্জ করে চলেছেন। এখন কেউ ধার-কর্জও দেয় না। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু তাদের নির্যাতন করছে পুলিশ।

এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেছেন, শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে লকডাউন কার্যকর করতে পারবে না সরকার। লকডাউন কার্যকর করতে হলে আগে শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পেটের ক্ষুধায় রাস্তায় নেমে অমানবিক নির্যাতনের শিকার শ্রমিকরা। এই নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, নগরীর কাকলীর মোড় পয়েন্টে ৫০টি এবং বটতলা পয়েন্টে ৫০টি রিকশা উল্টে রাখা ছিল। আমরা সেগুলো সোজা করে রিকশাচালকদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক রিকশা উল্টে রাখা হয়েছিল। এসব অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।

সরকারঘোষিত লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নামায় রিকশা উল্টে রাখা হয়

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, প্রাথমিকভাবে রিকশাচালকদের সতর্ক করতে কিছু সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল। পরে মানবিক দিক বিবেচনা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, রিকশাচালকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়নি। শুধু আটক করে রিকশা উল্টে রাখা হয়েছিল। তা না হলে তারা সতর্ক হবেন না। অযাচিত যেসব মানুষ নানা অজুহাতে বাইরে বের হয়ে ঘোরাফেরা করছেন, তাদের নিয়ে চলাচল করে সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন রিকশাচালকরা।

জাকির হোসেন মজুমদার আরও বলেন, আমাদের দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হচ্ছে। প্রথমত সরকারি নির্দেশনা, দ্বিতীয়ত মানবিকতা। আমরা মানবিক আচরণ না করলে রিকশাচালকরা খাবে কী? ফলে তাদের সতর্ক করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সড়কে লোক অপ্রয়োজনে আসবে না। এখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও সড়কে জনসমাগম বেড়ে গেলে আবার কঠোর হতে হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম