পুড়ছে নওগাঁর জনপদ
পাম্পের পানিতে পিপাসা মেটাচ্ছেন এক কৃষক
নওগাঁয় প্রচণ্ড তাপদাহে নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর শুকিয়ে গেছে। মাঠঘাট ফেটে চৌচির। বিস্তৃর্ণ জনপদ এখন ধূসর, বিবর্ণ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়ছে কৃষকের বোরো ধান চাষের সেচ খরচ। সব মিলে এ অঞ্চলের মানুষ এখন দিশেহারা।
আম বাঁচাতে সাপাহার উপজেলার ফুটকইল এলাকায় গাছের গোঁড়ায় বালতিতে করে পানি ঢালছিলেন ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন,‘এইবার লম্বা সময় বৃষ্টি নেই। এ রকম হলে চলবে কী করে। সূর্যের তাপে মনে হচ্ছে গাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে, আম টিকবে কী করে? তাই গাছের গোঁড়ায় পানি ঢালছি, যদি উপকার হয়।
বিজ্ঞাপন
নওগাঁর পোরশা উপজেলার নীতপুর গ্রামের আমচাষি শাহিন ইসলাম জানান, তাপদাহে তার আম ঝরে পড়ছে। বৃষ্টি হলে আমগুলো রক্ষা পেত। সকাল-বিকেল সাধ্যমতো গাছের গোঁড়ায় পানি দিচ্ছি। কিন্তু আবহাওয়া এতো গরম লাভ তেমন একটা হচ্ছে না। আমের জন্য এই মুহূর্তে একটা বৃষ্টি দরকার।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে সোমবার (১৯ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন ১৮ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৭ এবং সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রুক্ষ আবহাওয়ায় হঠাৎ ১৮ এপ্রিল জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ২০ হেক্টর জমির ধান হিটশকে নষ্ট হয়েছে।
সাপাহারের আইহার গ্রামের কৃষক জহুরুর (৪০) জানান, তাদের এলাকায় সেচের সংকট। ফলে বোরো ধান চাষের জন্য কৃষকদের বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এবার মাঠে বোরো ধান লাগানোর পর একবারও বৃষ্টি হয়নি। ফলে জমি সেচ সংকটে পড়ছে। আবার গভীর নলকূপ থেকে সেচের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাড়ছে আবাদের খরচ।
প্রচণ্ড তাবদাহে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। সর্বাত্মক লকডাউনের ভেতরেও যারা কাজের সন্ধানে রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা হাঁসফাঁস করছেন গরমে। মঙ্গলবার দুপুরে ব্রিজের মোড়ে রিকশা নিয়ে বসেছিলেন জুয়েল। তিনি বলেন, সূর্যের তাপ এতো বেশি মনে হচ্ছে, রাস্তার পিচ থেকে তাপ উঠছে। রাস্তায় চলাচল করা কঠিন।
বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ফেরদৌস মাহমুদ বলেন, নওগাঁ, রাজশাহী, খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে মৃদু তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা সামান্য কমছে। তবে নওগাঁতে তাপমাত্রা খুব একটা কমছে না। বৃষ্টিপাত না হলে আপাতত তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু কখন বৃষ্টি হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
শামীনূর রহমান/এসপি