গ্রেফতার নাজমুল হাসান

কুমিল্লার লালমাইয়ে এক নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী নাজমুল হাসানকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বড় চলুন্ডা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবুল খায়েরের ছেলে নাজমুল হাসান দুই বছর আগে একই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙ্গা বাজারের খলিল মেডিকেল হলে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি নেন। সেখানে ওষুধ ক্রয় করতে গিয়ে নাজমুলের সঙ্গে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রেমনল গ্রামের কৃষক মমতাজ উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার আইরিনের (১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিয়ের জন্য পরিবারের সম্মতি না পাওয়ার অজুহাতে নাজমুল আইরিনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। 

এরই মধ্যে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিয়ের দাবিতে নাজমুলের বাড়িতে অনশন শুরু করেন আইরিন। সারাদিন অনশনের পর ওই দিন রাতে স্থানীয় মাতব্বরদের মধ্যস্থতায় নাজমুলের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ১৪ অক্টোবর তিন লাখ টাকা কাবিনে আইরিনদের বাড়িতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই নাজমুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে তিন লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা আইরিনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। 

যৌতুকের টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে আইরিন বাবার বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। গত ৭ এপ্রিল সকালে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে শ্বশুরবাড়িতে গেলে আইরিনকে যৌতুকের দাবিতে পুনরায় শারীরিক নির্যাতন করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে স্বামী নাজমুল আইরিনকে ঘরে থেকে বের করে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে আছড়ে ফেলেন। ওই নির্যাতনের ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও গত ১৮ এপ্রিল রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

বিষয়টি নজরে আসায় মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে লালমাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব নির্যাতনের শিকার আইরিনকে শনাক্ত করেন। এ সময় আইরিন স্বামী নাজমুল হাসান, শাশুড়ি শামীমা বেগম, ভাসুর নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর আবুল খায়েরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। রাত ১০টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম নাজমুলকে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেন। 

লালমাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নির্যাতনের ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেই ওই নারীকে শনাক্ত করি। তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রেকর্ড করা হয়। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নির্যাতনকারী নাজমুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

আবু সুফিয়ান/আরএআর