পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম ছাত্র জীবন থেকেই পরোপকারী। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছে পটুয়াখালীর মানুষের সেবা করবেন। তাই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডাক্তারি। তার মাধ্যমে পটুয়াখালীর হাজার‌ হাজার মানুষের বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং সেটি এখনও অব্যাহত। ডা. শফিকুলের এমন অবদান দেখে এবার তাকে মেয়র হিসেবে পেতে চান পটুয়াখালী পৌরসভার মানুষ।

আসন্ন পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ইতোমধ্যে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ডা. শফিকুল ইসলাম। এ পদে মোট ৬ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে দুইজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। চারজন টিকে রয়েছেন।

আগামী ৯ মার্চ পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন। ইভিএম এর মাধ্যমে এবার এই পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে শেষ দিন। আপিল নিষ্পত্তি ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ।

ডা. শফিকুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পটুয়াখালী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পটুয়াখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তার শফিকুল ইসলাম পটুয়াখালী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের টাউন জৈনকাঠি এলাকার আহমেদ আলী মৃধা সন্তান। তারা ৭ বোন ও ৮ ভাই।

ডা. শফিকুল ইসলাম পুরোপুরি রাজনৈতিক ও আওয়ামী পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি আলোকবর্তিকা তরুণ যুবকের নাম। তিনি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১৯ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবনে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে তেজোদ্দীপ্ত ভূমিকা রাখায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ডা. শফিকুল ইসলাম ডাক্তারি পাস করে ঢাকায় বা বরিশালে স্থায়ী হতে পারতেন। কিন্ত তিনি সেটি করেননি। বিলাসী জীবন ও খ্যাতি-যশের মোহে আকৃষ্ট না হয়ে তিনি ছুটে এছেছেন প্রিয় জন্মভূমি পটুয়াখালীতে। তিনি যখন এলাকায় ছুটে আসেন তখন পটুয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ ছিল না। ছিল না তেমন বেশি ডাক্তারও। সদর হাসপাতালটিও চলতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হাতে গোনা যে ২/৪ জন ডাক্তার ছিলেন তারাও ছোট্ট শহর পটুয়াখালীতে বেশিদিন থাকতে চাইতেন না। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার পাওয়াও ছিল কঠিন। ঠিক এমন‌ সময় পটুয়াখালীবাসী পেয়েছিল সদ্য এমবিবিএস পাস করা ডা. শফিকুল ইসলামকে।

তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করে নিলেন সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। তিনি এলেন প্রকৃত সেবা দানের মানসিকতা নিয়ে। মানব সেবার মতো মহৎ কাজের জন্য। 
রোগী দেখা শুরু করলেন। চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেন। এমনভাবে রোগীদের সেবা দিতে লাগলেন যে আগে যেসব রোগী চিকিৎসার জন্য বরিশাল বা ঢাকায় যেতেন তারা এখন পটুয়াখালীতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া শুরু করলেন। 

পটুয়াখালী ৫নং ওয়ার্ডের স্বনির্ভর রোড এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া আহমেদ বলেন, নদীর পাড়ে আমাদের যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এতে আমাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন ভাড়া বাসায় থাকি। আমাদের সাবেক মেয়র শফিক ডাক্তার যখন পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন তখন আমাদের গরিব মানুষের কোনো ঘর-বাড়ি উচ্ছেদে করেন নাই। আমরা সব সময় তার কাছ থেকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডাক্তার শফিকুল ইসলাম একজন মানবিক মানুষ। তার হাত ধরে পটুয়াখালীর প্রান্তিক অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সেবা থেকে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। এবার পৌর নির্বাচনে পৌরবাসী তাকে সমর্থন জানাবেন এটাই আমাদের আহ্বান। 

কলাতলা হাউজিং মাঠ এলাকার বাসিন্দা মেহেদি বলেন, প্রথম যার হাত ধরে পটুয়াখালী শহরে উন্নয়নে ছোঁয়া লেগেছে তিনি হলেন পৌরসভার সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম। এবার তাকে আমরা পুনরায় মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। চারদিকে তাকে জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

পটুয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিন্টু দাস বলেন, ডাক্তার শফিকুল ইসলাম একজন মানবিক মানুষ আমরা তাকে এবার নির্বাচনে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় উন্নয়ন ছাড়া শহরের বেশিরভাগ জায়গায়ই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার কাছে ব্যবসায়ীক অনেক টাকা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের চিকিৎসা করাতে পারেনি। সেই থেকে তিনি চিন্তা করেছেন বাবা তার ছেলেমেয়েদের কে সুশিক্ষিত করে এই ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত করবেন। তার সেদিনের ইচ্ছে থেকেই সাধারণ মানুষের কষ্ট দুর্ভোগ দেখে আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আমার বন্ধুরা অনেক বড় বড় ডাক্তার হয়েছে। তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আমি পটুয়াখালীতেই রয়েছি এলাকার মানুষের সাহায্য সহযোগিতা ও চিকিৎসা সেবা দিতে। 

তিনি আর বলেন, আমি যদি মেয়র হতে পারি তাহলে নগর মাতৃ সদন হাসপাতালগুলো প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ বেড করে নির্মাণ করব এবং এখানে গরিব, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

১৮৯২ সালে ১ এপ্রিল ২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে পটুয়াখালী পৌরসভা গঠিত হয়। ডা. শফিকুল ইসলাম ২০১১ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ৮ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং জনগণ তার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। সার্বিক মূল্যায়নে এই মুহূর্তে ডাক্তার শফিকুল ইসলাম জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করতে সমর্থ্য হয়েছেন। 

এবারের নির্বাচনে পটুয়াখালী পৌরসভায় ৫০ হাজার ৬৯৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯৪৭ জন ও মহিলা ভোটার ২৬ হাজার ৭৫০ এবং দুইজন আছেন হিজরা ভোটার। 

এমএএস