ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও
লক্ষ্মীপুরে ‘সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি কথিত এনজিও তিন শতাধিক গ্রাহকের সঞ্চয়ের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের লামচরী এলাকায় সেই এনজিওর কার্যালয় কাউকে না পেয়ে ভিড় জমান ঋণ নিতে আসা গ্রাহকরা।
ভবন মালিক শাহজাহান ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি বলেন, শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয়ে আবদুল আসাদ রাসেল নামে এক ব্যক্তি তার ভবনে একটি কক্ষ ভাড়া নেন। রোববার তাকে ভাড়া বাবদ অগ্রিম টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই তারা পালিয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওটি লক্ষ্মীপুর পৌরশহরের লামচরী এলাকার মুন্সিবাড়ির ২০ জনের ২ লাখ টাকা, শহরের বাঞ্চানগর এলাকার জেবি সড়কের ১২ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, লাহারকান্দি এলাকার ১২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৮০ হাজার, সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর এলাকার ১৫ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার, লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের ৪০ জনের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একইভাবে শাকচর ইউনিয়ন ও চররুহিতা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানের ৩ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোট অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ওই এনজিওর লোকজন।
রোববার এনজিও কার্যালয়ের সামনে শাকচরের মো. নিজাম, মধ্য আবির নগরের জহির হোসেন, সবুজ হোসেন, ভবানীগঞ্জের শাহিনুর বেগম, মুন্নি আক্তার, মোবাশ্বেরা বেগম, ফাতেমা বেগম, মান্দারীর মোহাম্মদ নগর গ্রামের আবদুল্লাহ, পৌর লাহারকান্দি এলাকার ফারুক হোসেন ও নিজাম উদ্দিনসহ অনেকেই জড়ো হয়। এ সময় অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন জেনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্যালয়ের ভবনটি নতুন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি এনজিওটি এখানে আসে। স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয়ে আবদুল আসাদ রাসেল কয়েক কোটি টাকা ঋণ দেওয়া কথা লোকদের বলেন। এর মধ্যে এখানে আসার ১৩ দিনের মাথায় শনিবার শতাধিক গ্রাহক এসে কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমায়। কিন্তু এনজিওর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা উধাও।
পৌর শহরের জেবি সড়কের কহিনুর বেগম বলেন, আমাকে এখানকার কেন্দ্র প্রধান করা হয়েছে। ৩ লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। আমার এখানে ১২ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন ঋণের জন্য এসে দেখি কার্যালয়ে সাইনবোর্ড ঝুলানো, গেইটে তালা।
মান্দারীর মোহাম্মদনগর গ্রামের আবদুল্লাহ মিয়া বলেন, আমার এলাকার ১২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়েছে। একেক জনকে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এখন ঋণ নিতে এসে জানতে পারি এনজিওটি ভুয়া।
ভবানীগঞ্জের ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামী কাজ করতে পারে না। ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে রয়েছে। ঘরটিও জরাজীর্ণ। এনজিওর লোকজন বলেছে এটি বিদেশি কোম্পানি। আর তাদের এ শাখায় ঋণের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে। সে আশায় কিছু অলংকার বন্ধক দিয়ে ২১ হাজার টাকা দিয়েছে। রোববার ঋণের জন্য আসতে বলেছে। এখন এসে দেখি গেইটে তালা।
ওই কার্যালয়ে পরিচারিকা হিসেবে ৪ দিন কাজ করেছেন পৌর শহরের লামচরী এলাকার মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা সুমি আক্তার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের মালিক আমাকে সেখানে কাজ করতে বলেছেন। পরে আমি ৪ দিন কাজ করেছি। তারা আমাকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতন দেবে বলেছে। এর আগে আমি ৬ হাজার টাকা দিয়ে ওই এনজিওতে ভর্তি হই। আমার প্রতিবেশী ১০-১২ জনও প্রায় ১ লাখ টাকা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে এনজিওটির ব্যবস্থাপক পরিচয়দানকারী আবদুল আসাদ রাসেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অখিল গোলদার বলেন, এনজিও কার্যালয়ের সামনে গিয়ে গ্রাহকদের জড়ো হতে দেখা গেছে। তাদেরকে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, গ্রাহকদের পক্ষে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এনজিওর কার্যালয়ে তালা থাকায় প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এএএ