গাজীপুরে গত ১৫ ঘণ্টায় তিনজনের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামে এক গৃহবধূ, শনিবার দুপুরে শৈলাট গ্রামে যুবক ও কালিয়াকৈরে এক ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে।

জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে নগরহাওলা গ্রামে স্বামীর মারধরের পর শুক্রবার দিবাগত রাতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ মুন্নি বেগম (২১)। মুন্নি বেগম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চরকুইয়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের স্ত্রী। স্বামীর সঙ্গে শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের মো. মাজাহারুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, বিভিন্ন সময় তাদের তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হতো। গতকাল রাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়। এক পর্যায়ে সানোয়ার মুন্নিকে মারধর করে। ধারণা করছি, মারধরের কারণে মুন্নি ঘরের বাহিরে গিয়ে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

শনিবার জেলার শ্রীপুর উপজেলায় দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের শৈলাট গ্রাম থেকে মনু তালুকদার নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত যুবক মনু তালুকদার (২৩) শৈলাট গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে।

মৃতের স্বজন আফতাব উদ্দিন বলেন, মনু তালুকদার দীর্ঘ কয়েক বছর মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন। শনিবার দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরবর্তীতে আত্মীয় স্বজনরা জানতে পেরে ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিন্টু মোল্লাহ্ বলেন, খবর পেয়ে শনিবার সকালে গৃহবধূ ও দুপুরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুটি ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের পল্লী বিদ্যুৎ খাজারটেক এলাকায় শনিবার সকালে ৫শ টাকা না দেওয়ায় বাবা-মায়ের উপর অভিমান করে নাজমুল নামের ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। নিহত নাজমুল টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার লাউখোলা গ্রামের আরিফ হোসেনের ছেলে। নাজমুল তার বাবা-মার সঙ্গে কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লী বিদুৎ খাজারটেক এলাকার দুলাল উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার বাবা রাজমিস্ত্রি ও মা স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

এলাকাবাসী, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাবা আরিফের কাছে ৫শ টাকা চায় নাজমুল। এসময় টাকা চাওয়ার কারণ ও টাকা না থাকার বিষয়টি নাজমুলকে জানায় তার বাবা। এ নিয়ে নাজমুল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে।

ওই টাকা না পেয়ে অভিমান করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় নাজমুল। পরে তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে তাকে সেখান থেকে নামিয়ে গাজীপুরের জিরানী শেখ ফজিলাতুনন্নেসা মুজিব বিশেষায়িত হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুলকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে কাশিমপুর মেট্রো থানা পুলিশ ওই হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শিহাব খান/পিএইচ