পারুল হোমিওসহ ৩ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল
পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির ভবন
বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। লাইসেন্স সাময়িক বাতিল হওয়া অপর দুই প্রতিষ্ঠান হলো- পুনম হোমিও ল্যাবরেটরি ও জেলার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (ইউনানি)।
গত ২০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটিতে বগুড়ার তিনটিসহ সারাদেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ৮০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ না করা এবং উৎপাদন লাইসেন্স ইস্যুর শর্ত ভঙ্গের দায়ে বগুড়ার পারুল হোমিও ল্যাবরেটরি প্রাইভেট লিমিটেড এবং পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজের উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হলো। এছাড়া ড্রাগ কন্ট্রোল আইন ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজের (ইউনানি) উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হলো।
গত ৩১ জানুয়ারি রাতে শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় একটি বিয়ে বাড়িতে এবং শহরের কালিতলা ও ভবের বাজার এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়। পরবর্তী কয়েক দিনে বগুড়ার কাহালু, সারিয়াকান্দি ও শাজাহানপুর এলাকায় আরও ১২ জনসহ মোট ১৮ জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে মদপানে আটজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানায়।
বিজ্ঞাপন
মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের পর চলে অভিযান। এ সময় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির নাম সামনে চলে আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় যে কজন মারা যান তাদের কেনা দেশীয় মদ (রেক্টিফাইড স্পিরিট) পারুল হোমিও হলের তৈরি।
এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি মদপানে অসুস্থ এক ব্যক্তির ভাই মনোয়ার হোসেন পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মচারীসহ ১৬ জনের নামে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। মামলার পর অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির মালিক শহরের ফুলবাড়ি এলাকার নুরুন্নবী ওরফে নুরনবী (৫৮) এবং তিনটি দোকান যথাক্রমে শহরের গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও হলের মালিক আব্দুল খালেক (৫৫), করতোয়া হোমিও হলের মালিক শহিদুল আলম সবুর (৫৫) ও হাসান হোমিও হলের কর্মচারী আবু জুয়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত মদ উৎপাদন এবং বিক্রির অভিযোগ আনা হয়।
উৎপাদন লাইসেন্স স্থগিত করা বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজের (ইউনানি) মালিক আইয়ুব আলী জানান, তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র স্থানান্তর করবেন বলে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানটির স্থানান্তর কাজ সম্পন্ন হবে এবং তারপর লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করবেন।
জেলায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে জানান, মামলার তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই চার্জশিটও দেওয়া যায়নি। ওই মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির মালিক নুরুন্নবী এখনও কারাগারে আছেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকায় গ্রেফতার নুরুন্নবীর মালিকানাধীন পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিতে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ ছিল একই ভবনের অপর প্রান্তে অবস্থিত নুরুন্নবীর ভাই নুর আলমের মালিকানাধীন পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজ নামে অপর প্রতিষ্ঠানও। অনেক ডাকাডাকির পর ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর গড়ে তোলা আবাসিক ভবন থেকে এক কিশোরীসহ দুই নারী নেমে আসেন। তারা নিজেদের পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজের মালিক নুর আলমের স্ত্রী ও কন্যা পরিচয় দেন। তবে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তারা ওষুধ প্রশাসন থেকে উৎপাদন লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ওষুধ প্রশাসনের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে পুলিশের অভিযানের পর থেকেই পারুল হোমিও ল্যাবরেটরি ও পুনম হোমিও ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ রয়েছে। পারুল হোমিও হলের মালিক নুরুন্নবী এখনও জেলখানায় রয়েছেন।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর