জলিল বেপারীর বাড়ির ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাভলু খানকে মারধর করেছিল তার প্রতিপক্ষ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন এমন গুজব তুলে কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে বসত বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে লাভলু খানের সমর্থকরা। আগুনে এক গৃহস্থের বসত ঘরের লবণের বাটিটিও অবশিষ্ট নেই আর। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

শনিবার (২ মার্চ) সকালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের খায়েরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

অসুস্থ অবস্থায় লাভলু খান বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি আংগারিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খায়ের চর গ্রামে আধিপত্য ও জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খান ও মোল্লা গোষ্ঠীর সঙ্গে বেপারী গোষ্ঠীর বিরোধ চলমান ছিল। বিরোধকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে ওসমান বেপারীকে মারধর করে খান ও মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন। এ নিয়ে শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে বেপারী গোষ্ঠীর আব্দুর রব বেপারীর ছেলে কাউসার বেপারী ও কাদের বেপারীর ছেলে রাব্বি বেপারীসহ অন্যান্যরা লাভলু খানকে মারধর করে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। আহত অবস্থায় লাভলু খানকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। রাতে লাভলু খান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এমন গুজব তোলে খান ও মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন। এরপর সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা ও লুট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় খান ও মোল্লা গোষ্ঠীর মামুন খান, নিজাম খান, মফেজ খান, জামাল খান, আমির মোল্লা, নুরুজ্জামান মোল্লা ও ফরহাদ মোল্লাসহ তাদের লোকজন। আগুনে জলিল বেপারীর বাড়ির ৪টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে একটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই ঘরের লবণের বাটিটি পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। এছাড়াও এস্কান বেপারী, আবু তাহের বেপারীর ঘরের জানালা ভেঙে লুটসহ মোট ৮টি বাড়িতে এ তাণ্ডব চালানো হয়। খবর পাওয়ার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে আগুন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

জলিল বেপারীর পুত্রবধূ ঝুমুর বেগম (২৪) ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে আমার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ছিল। এ কেমন দলবল! এভাবে আমার সব পুড়িয়ে দিল। আমার ঘরের লবণের বাটিটি পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই। যারা মিথ্যা গুজব তুলে, এমন তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।

আব্দুল বারেক বেপারী নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোরে তারা গুজব ছড়িয়েছে যে লাভলু খান মারা গেছে। এই খবর শুনে লাভলু খানকে যারা মারধর করেছিল, তারাসহ লাভলু খানের প্রতিপক্ষের অনেক লোকজন পুলিশের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এই ফাঁকে লাভলু খানের লোকজন রাজারচর, কাশিপুর, দাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানের গুন্ডা নিয়ে এসে বাড়ি ঘর লুট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ সরে গেলে তারা আবার হামলা করবে, আমরা এই ভয়ে আছি।

এস্কান বেপারীর স্ত্রী পারুল বেগম (৫৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। ঘরে আমার নতুন বউ। নতুন বউয়ের ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে গেছে তারা। আমি এর বিচার চাই।

আবুল বাসার ফকির নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকায় আধিপত্য ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। এ নিয়ে ১৫ দিন আগে একটি মামলাও হয়েছে। এই ইস্যু নিয়ে গতকাল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাভলু খানকে মারধর করা হয়েছে। লাভলু খান হাসপাতালে মারা গেছে এমন গুজব উঠলে যারা আসামি হবে তারা নিজেদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে চলে গেছে। আমি এমনটাই জানি।

শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর আমজাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি দুইটি ঘরে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি টিম এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

বিষয়টি নিয়ে পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাভলু খান হাসপাতালে মারা গেছে এমন গুজব তুলে বাড়ি ঘরে হামলা করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাইফ রুদাদ/এএএ