মসিক নির্বাচন
উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চান ভোটাররা
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাত পোহালেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) ভোট। এ লক্ষ্যে সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি। সিটির ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে ভোট। আগমুহূর্তে সাজ সাজ রব পুরো নগরজুড়ে। পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে প্রত্যেকটি এলাকা। এ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন ভোটাররা।
এবার দ্বিতীয়বারের মতো সিটির এই নির্বাচনে পাঁচ মেয়রসহ মোট ২২৩ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারণায় নগরী মুখর করে রাখেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সকলেই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এতে ভোটারদের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভোটের নগরী ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের প্রচারণা চোখে পড়েছে ভোটারদের। তাদের একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। ঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়াই করা এই প্রার্থী নগরীতে প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি করেছেন। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া) ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি) প্রচারণা চালিয়েছেন বেশ জোরেশোরেই।
ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের চা দোকানি চন্দন পাল। ভোটের আগ্রহ নিয়ে মতামত জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আমরা সকলেই ভোট দিতে খুব আগ্রহী। এ নির্বাচনে সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ভোটাররা চান নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরিবেশ। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে ভোট নিয়ে তাদের মাঝে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। আমিনুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, পুরো প্রচারণা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই ভোটের দিনও যেন এমন পরিবেশ বজায় থাকে। তাহলে আমরা সপরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারব।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, আমি গত ৭০ বছরে এত বেশি প্রচারণা কখনো দেখিনি। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাজ সাজ রব উঠেছে। এতে ভোটার উপস্থিতি অনেক বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।
থাকবে বাড়তি ইভিএম মেশিন
শুক্রবার দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম। বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে ৭টি বুথ থেকে ইভিএম বিতরণ করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। ১৩৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ইভিএম বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০টি ভোট কক্ষের জন্য দেড় হাজার ইভিএম মেশিন থাকবে। প্রায় ৫০০ ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে কেন্দ্রগুলোতে। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে যেন ভোট বিলম্ব না হয় সে কারণে বাড়তি ইভিএম রাখার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো সংঘাতের আশঙ্কা দেখছি না। আচরণবিধির ক্ষেত্রে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থীদের বলা হয়েছে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থীতা হারাতে পারে। মেয়র, পুরুষ ও নারী কাউন্সিলর থাকায় প্রচারে ত্রিমুখী ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। সে কারণে ভোটার বাড়বে আশা করা হচ্ছে।
সব কেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব
ময়মনসিংহ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সব ভোটকেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার মিলে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া থাকবে মোবাইল টিম, স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিজিবি ও র্যাব। ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়ে রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। ১৫৩৬ জনের আনসার, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১৭ টিম র্যাব কাজ করবে। সকলের অংশগ্রহণে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হবে। সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তপসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে কেবল কাউন্সিলর পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উবাইদুল হক/এএএ