রংপুরের পীরগাছায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মাহুতির ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী সরকারসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে উপজেলা নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত বিশাল এক মানববন্ধনে তারা এ ঘোষণা দেন।

আয়োজিত মানববন্ধনে যোগ দিতে দুপুর ১২টা থেকেই দলে দলে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ আসতে থাকে। দুপুর ২টায় পুরো স্টেশন এলাকা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

এতে বক্তব্য দেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, উপজেলা নাগরিক পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙা, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল হক লিটন, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আফছার আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা, পীরগাছা সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ ফাহমিন হাসান রনু, রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খাঁন, উপজেলা জামায়াতের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ, সিনিয়র সাংবাদিক এম খোরশেদ আলম, পীরগাছা কলেজের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোতালেব হুসাইন প্রমুখ।

বক্তারা অবিলম্বে পীরগাছায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি দাবি জানান এবং প্রথম দিন থেকেই ট্রেনটির যাত্রাবিরতি না দিলে লাগাতার আন্দোলন ও গণজমায়েত করার ঘোষণা দেন। পরে মিছিলসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. নাজমুল হক সুমনের নিকট দাবি সম্মিলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ সহজ করতে নতুন ট্রেন ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই ট্রেনটি লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাবে। সেখানে লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটের একটি ট্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বুড়িমারী পর্যন্ত যাবে।

শনিবার (৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশপত্রে এ বিষয়টি জানানো হয়।

ঢাকা-বুড়িমারী-ঢাকা রুটে নতুন আন্তঃনগর ৮০৯/৮১০ নম্বর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন আগামী ১২ মার্চ থেকে চালু হবে।

নির্দেশপত্রে বলা হয়, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বুড়িমারী-ঢাকা-বুড়িমারী রুটে অবমুক্ত কোচ দিয়ে আরও এক জোড়া বুড়িমারী এক্সপ্রেস পরিচালনার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত হয়েছে। নতুন বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের নম্বর হচ্ছে ৮০৯/৮১০। এটি ‘খ’ শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেন।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) ঢাকা স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যাবে এবং লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। এরপর ট্রেনটি ওই স্টেশনে যুক্ত হবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটের ৪৫৫ নম্বর ট্রেনের সঙ্গে। লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ৬টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।

অন্যদিকে বুড়িমারী কমিউটার (৪) ট্রেন বুড়িমারী স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে এসে লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে। ওই স্টেশনে ট্রেনটি যুক্ত হবে বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) ট্রেনের সঙ্গে। ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টায়।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) বুড়িমারী ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) এর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ১৪ কোচের ট্রেনে মোট আসন থাকবে ৬৩৮/৬৫৩টি। ট্রেনের রেক বেজ ও ওয়াটারিং করা হবে লালমনিরহাটে এবং ক্লিনিং করা হবে বুড়িমারীতে।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস যেসব স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে

৮০৯ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী বাইপাস, নাটোর, সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া, লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতীবান্ধা, বড়খাতা ও পাটগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

অন্যদিকে ৮১০ নম্বর ট্রেনটি পাটগ্রাম, বড়খাতা, হাতীবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার, নাটোর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

বিদ্যমান সময়সূচি-৫৩ মোতাবেক রেকটি লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের অবমুক্ত কোচ দ্বারা এবং লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটে সংযোগ সাটলের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। প্রস্তাবিত মূল ট্রেনটির ভাড়া ও বুড়িমারী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে সংযোগকারী ট্রেনের ভাড়া আলাদাভাবে নির্ধারণ করতে হবে। ৮০৯/৮১০ নম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটির অধিক বিলম্বতা এড়ানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ৭৮৯/৭৯০ নম্বর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের রেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহার করা যাবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ