সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে একই বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করার পাশাপাশি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।

সিন্ডিকেটের সভা শেষে দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন হয়রানির অভিযোগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে স্থায়ী বরখাস্ত এবং বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করার আগে ভাববে। পাশাপাশি আন্দোলন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের আচরণে মনঃক্ষুণ্ন হলে, তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

এর আগে সম্প্রতি মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে যৌন হেনস্তার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুধবার (১৩ মার্চ) ওই দুই শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের এই আদেশে নাখোশ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের গতি বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ সকল বিভাগে এবং ব্যাংকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে আন্দোলনকারীরা এই দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল আটকে দেয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা।        

এই অবস্থায় মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১৪ মার্চ সকালে ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে যৌন হয়রানির ঘটনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ঘোষিত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেয়।

এ সময় ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ন কবীরসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে গত ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করে ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।  

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার ড. আতাউর রহমানকে প্রধান করে ৫ মার্চ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এই তদন্ত কমিটি গঠনের একদিন পর ৬ মার্চ আন্দোলনকারীরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা ওই বিভাগের শিক্ষকদের নেমপ্লেট ভাঙচুর করে বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে দাবি মেনে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকেও তদন্তের আওতায় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা।

উবায়দুল হক/এএএ