আমেনা খাতুন। বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। তার স্বামী অন্ধ তিনি চলতে পারেন না। সারাদিন ঘরেই পরে থাকেন। এ বয়সেও মানুষের বাড়িতে কাজ করে অন্ধ স্বামী ও নিজে কোনোমতে দিন পার করেন। তবে এখন তার মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। এমনিতেই যেখানে খাদ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি তার ওপর রমজানে পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। এতে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।

রমজানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ১০ টাকায় দেড় হাজার টাকার পণ্য দিচ্ছেন জেনে তা নিতে এসেছেন। তখন তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মাইনসের বাড়িত কাই কইরা খাই। এহন জিনিসের দাম বেশি। তাই রমজানে আলু ভর্তা আর মরিচ দিয়া ভাত খাইয়া রোজা থাকি।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে বরগুনার প্রায় ৩ শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ ও অসহায় পরিবার চাল, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

সোমবার (১৮ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে ‘রোজাদারের রোজার বাজার’ নামে দিনব্যাপী এ বাজার আয়োজনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিয়া ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ আয়োজনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে ভোজ্যতেল, চাল-ডাল, ছোলা, লবণ, ডিম, মাছসহ প্রায় ১৫টি পণ্যের সমাহার সাজিয়ে বসেছেন সংগঠনটির সেচ্ছাসেবীরা। অসহায় দরিদ্র যে কেউ নির্দিষ্ট কিছু শর্ত অনুযায়ী ১০ টাকা পরিশোধ করে ১০টি টোকেন সংগ্রহ করে চাহিদা মতো যেকোনো ১০টি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। আর এ আয়োজনের মাধ্যমে কম টাকায় বাজার ক্রয় করতে সকাল থেকে ভিড় করছেন বরগুনার বিভিন্ন এলাকার অসহায় দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স মিলনায়তন ঘুরে দেখা যায়, বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা হলেও এখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ টাকায়। ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১ টাকা, দুই কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়। এছাড়াও ডাল, চিনি, মাছ, খেজুরসহ এখানে যা আছে তা সব কিছুই বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ১টাকায়। 

বরগুনার ফরাজি পুল নামক এলাকা থেকে রমজানের বাজার ক্রয় করতে এসে হাবিব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ১০ টাকায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকার বাজার করতে পেরেছি। এতে আমাদের পরিবারের ১০ দিন চলে যাবে। কম টাকায় এত কিছু ক্রয় করতে পেরে আমি আনন্দিত। 

বরগুনার রায়ের তবক সোনাতলা নামক এলাকার একজন কাঠমিস্ত্রি মো. শাহিন হাওলাদর ঢাকা পোস্টকে বলেন, দশ টাকার বিনিময়ে আমরা অনেক কিছুই কিনতে পেরেছি। মাছ, মাংস, ডিম, চালসহ অনেক কিছুই কিনেছি। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে ১০ টাকায় ব্যাগ ভর্তি বাজার ক্রয় করতে পেরে আমরা অনেক খুশী। 

এ বিষয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে যারা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছে তাদের পরিবারে একটু হলেও স্বস্তি এনে দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে। সারা দেশে আমরা বাজার বসিয়ে ২০ হাজার মানুষকে কম দামে বাজার ক্রয় করার সুযোগ তৈরি করব।

মো. আব্দুল আলীম/এএএ