রতন মিয়া

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র রিকশাচালক রতন মিয়া (৫০)। রিকশা চালিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে তার ডান পা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তারপর পায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে একমাত্র সম্বল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি বিক্রি করে দিতে হয়। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশেষে ডান পা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।

এ অবস্থায় জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তার স্ত্রী। রতন ভাড়ায় একটি রিকশা নেয়। তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন রতন মিয়া। এ অবস্থায় সেখানে তার মানবেতর জীবন শুরু হয়।

রতন মিয়ার মানবেতর দিনযাপনের বিষয়টি জানতে পারেন কেন্দুয়া পৌর শহরের বাসিন্দা মামুনুল কবীর খান হলি নামে তরুণ এক সমাজসেবক। তিনি যোগাযোগ করেন অসহায় রতন মিয়ার সঙ্গে এবং এলাকায় ফিরে এলে তাকে একটি নতুন রিকশা কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন রতন মিয়া এবং শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে যোগাযোগ করেন মামুনুল কবীর খান হলির সাথে। এ সময় মামুনুল কবীর হতদরিদ্র রতন মিয়াকে বিশেষভাবে তৈরি করা ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি নতুন রিকশা তার হাতে তুলে দেন। জীবন চালানোর অবলম্বন নতুন রিকশাটি উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান অসহায় রতন।

রতন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমি খুবই অসহায় অবস্থায় ছিলাম। কিভাবে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার এ কষ্টের কথা শুনে মামুনুল কবীর খান হলি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমি আমার এলাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে পারব। এ সময় তিনি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন এবং রিকশা দাতা মামুনুল কবীর খান হলির জন্য দোয়া করেন।

এ বিষয়ে তরুণ সমাজসেবক মামুনুল কবীর খান হলির সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের কারণে রতন মিয়া ঢাকায় কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। পরিবারটির এমন অসহায়ত্বের কথা শুনে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। রতন মিয়াকে রিকশাটি কিনে দিতে পেরে ভালো লাগছে।

জিয়াউর রহমান/এসপি