কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেয় ছাত্রলীগ

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সৈয়দপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ছাত্রলীগের দেওয়া তালা খুলে দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মার্চের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েক দিন ধরে সৈয়দপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে গত সোমবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাঈল অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ছাত্রলীগ ও স্থানীয় সুধীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যক্ষের কক্ষের তালা খুলে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্থানীয় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণপত্র পেয়েও যোগ দেননি।

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন বলেন, সৈয়দপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান জামায়াত-শিবিরপন্থী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের নিরীহ বাঙালির ওপরে হামলা করে গণহত্যা চালায়। আর গণহত্যা দিবসে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে জামায়াত-শিবিরকে আশ্রয় দিয়েছেন। তাই আমরা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে এভাবে তালা দেওয়া সমীচীন নয়। আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টা বুঝেছে ছাত্রলীগ। ফলে তারা নিজেরাই অধ্যক্ষের কক্ষের তালা খুলে দেয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যদি নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই তা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে  লিখিতভাবে জানাতে হবে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান কেউ বর্জন করেছে কিনা তা আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ কলেজে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ না বলার অভিযোগে গত ১৩ মার্চ থেকে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে কলেজ ছাত্রলীগ। কিন্তু অধ্যক্ষ ৭ মার্চ ছুটিতে ছিলেন এবং ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। গোলজার হোসেন নামে একজন শিক্ষককে ওই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক করেন তিনি। ছাত্রলীগ ও কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ- অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ না বলেই অনুষ্ঠান শেষ করেছেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হওয়ায় কোনো প্রকার জবাবদিহি করেননি। এ কারণে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে বসেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ছাত্রলীগ গত ২৪ মার্চ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে তার কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। 

শরিফুল ইসলাম/আরএআর