রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, আমরা ভাতার জন্য যুদ্ধ করি নাই, আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য, হানাদারমুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করেছি। সে সময় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও কৃষক পরিবারের সন্তানরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোমন্দ, সুযোগ-সুবিধা দেখেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সম্মান দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে অফিসার্স ক্লাব চত্বরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজবাড়ীতে ৪ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রেলমন্ত্রী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তাকে জাতীয় পতাকা দিয়ে সম্মান জানানো হয়, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচার জন্য সম্মানি ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরির জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোমন্দ একমাত্র দেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আপনাদের সাথে যুদ্ধ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে আপনাদের সম্মানিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, রাজবাড়ীকে রেলের শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নতুন স্টেশন করা হবে। যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলের মেরামত কারখানা হবে। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। রাজবাড়ীতে রেলওয়ের একটি ডিভিশন তৈরি করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ হবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে ১৫ লাখ লোক নিরাপদে ট্রেনে বাড়িতে যেতে চায়। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য আছে ৩০ হাজার টিকিটের। সবাইকে তো আমরা দিতে পারব না। তারপরও টিকিট যাতে কালোবাজারি না হয় এবং সুন্দরভাবে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়িতে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, রেলওয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা জানেন বিএনপির সময় ফরিদপুর ও ভাটিয়াপাড়ার রেল তুলে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই রেল আবার চালু করা হয়েছে। এখন রাজবাড়ী থেকে ২ ঘন্টা ২০ মিনিটে ঢাকা যাওয়া যাচ্ছে। রেলে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল, আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো দূর করে আরও ভালোভাবে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দরে রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যহত থাকে, দেশটা সত্যিকারের স্মার্ট দেশে পরিণত হয়, মানুষ যাতে সুযোগ-সুবিধা পায় সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার সিরাজ আহম্মেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন,জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আমজাদ হোসেন মন্টু, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল জলিল মিয়া, যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাকাউল আবুল হাসেম প্রমুখ।

এ সময় জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারগণ, চার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডা. আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন, জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস ও স্কুলশিক্ষিকা চায়না রাণী সাহা। 

এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে ৪ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর