সম্প্রতি লবণ পানির কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি গবেষণার জন্য সুন্দরবনে চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে অবমুক্ত করা হয়েছে। অবমুক্ত করা চারটি কুমিরের মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করলেও একটি কুমির বের হয়ে লোকালয়ের দিকে এসেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিরটি সুন্দরবন থেকে বাগেরহাট হয়ে পিরোজপুরের তুষখালি নদীতে অবস্থান করছে। কুমিরের এমন গতিবিধিতে নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।  

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনের লোনা পানির চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানো হয়েছে। পরে দেখা যাচ্ছে, তিনটি কুমির সুন্দরবনে ফিরে গেছে, তবে একটি বহু পথ ঘুরে এখন বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরে ঘোরাফেরা করছে। মাত্র ১১ দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। কুমিরটি নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। 

কুমিরটির গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিরটি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালীর একটি নদীতে রয়েছে। গত ১৩ মার্চ সর্বপ্রথম দুটি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত ১৬ মার্চ স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে আরও একটি কুমিরের সঙ্গে এই কুমিরটিকেও অবমুক্ত করা হয়েছিল সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে।  কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করেছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।

আজাদ কবির আরও বলেন, সুন্দরবনের কুমির কোথায়, কীভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে এর আগে  বিস্তারিত কোনো গবেষণা হয়নি। আমরা প্রতি বছরই সুন্দরবনে কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে অবমুক্ত করে থাকি। এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০০ কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের গতিবিধি ও পরবর্তীতে তারা কোথায় যায় সেসব গবেষণা কখনো করা হয়নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে। ফলে আমরা কুমিরের আচরণ ও গতিবিধিতে আরও ভালোভাবে নজর রাখতে পারব। 

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহম্মদ নুরুল করিম জানান, এর আগে সুন্দরবনে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে কচ্ছপের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছিল তবে কুমির নিয়ে সুন্দরবনে এটিই প্রথম গবেষণা। কুমির গবেষণার এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে আইইউসিএন আর জিআইজেড। আগামী এক বছর এই কুমিরগুলোকে নজরদারিতে রাখা হবে। গবেষণা চালানো কুমিরের ভেতরে দুটি নারী ও দুটি পুরুষ কুমির রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

শেখ আবু তালেব/আরএআর