১৪০ বছরে পদার্পণ করেছে বৃহত্তম শিল্প ও বন্দরনগরী খুলনা। রোববার (২৫ এপ্রিল) খুলনার ১৩৯তম জন্মদিন। এ দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছরই খুলনায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মদিন উদযাপন করা হলেও এবার নেই সেই জৌলুস। প্রতি বছর খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্যসম্বলিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

এবার নেওয়া হয়নি কোনো কর্মসূচিই। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের এ দিনটি অসহায় দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার নেই কোনো আয়োজন। 

বিগত বছরে খুলনার জন্মদিন পালন আসছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরে জন্মদিন পালন করা হয়। দিনটিকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর থেকে এই আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে খুলনার জন্মদিনে অসহায়, দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার সংকটময় মুহূর্তে এবার আমরা কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। যে কারণে এবার আর আগের সেই জৌলুস নেই।
 
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহসভাপতি শাহিন জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমদিকে দুই বছর জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে জন্মদিন পালন করে। এছাড়া আমাদের কর্মসূচিতেও তারা এবং জনপ্রতিনিধিরা সেই সময় অংশ নেয়। এরপর থেকে আমরা গত ৮ বছর ধরে জন্মদিন পালন করে আসছি।

সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনায় এ বছর কোনো কর্মসূচিই পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ইফতার মাহফিল ও খুলনা দিবসসহ নানা কর্মসূচি হাতে ছিল।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা ও ভৈরব নদীতীরে খুলনা শিল্পনগরীর অবস্থান। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনা। নদ-নদীবিধৌত হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) স্মৃতিবিজড়িত শহর, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা অপরূপ এ জেলাটি লম্বা আকৃতির। দেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম।

১৮৪২ সালে ভৈরব-রূপসাবিধৌত পুণ্যভূমি নয়াবাদ থানা ও কিসমত খুলনাকে কেন্দ্র করে নতুন জেলার সদর দফতর স্থাপিত হয় খুলনায়। খুলনা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশদের প্রশাসনিক এলাকা বৃদ্ধি ও ভৌগোলিক অবস্থার কারণে খুলনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে ৪ হাজার ৬৩০ বর্গমাইল এলাকা, ৪৩ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাকে নিয়ে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুলনার ১৩৯তম জন্মদিন আজ। এর আগে খুলনা ছিল যশোর জেলার মহকুমা। ব্রিটিশ শাসক ডাব্লিউ এম ক্লে জেলার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

খুলনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, খুলনা নামকরণের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত মত হচ্ছে- ধনপতি সওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুলনার নামে নির্মিত ‘খুলনেশ্বরী মন্দির’ থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি।

১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করা রেকর্ডে লিখিত ‘Culnea’ শব্দ থেকে খুলনা। বিজ্ঞজনের মতে ‘কিসমত খুলনা’ মৌজা থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বৃটিশ আমলের মানচিত্রে লিখিত Jessore-Culna শব্দ থেকে খুলনা এসেছে বলেও অনেকের ধারণা।

মোহাম্মদ মিলন/এমএসআর