সাবধান কামরুল তোর জন্য অনেক বড় ভয়ঙ্কর বিপদ আসতে যাচ্ছে। যদি তুই বা তোর বড় ছেলে বিদেশ আসিস। তোর ছোট ছেলের মাথা থাকবে এক জায়গায় বডি থাকবে অন্য জায়গায়। ওইদিন তোর বড় ছেলেকে খুন করতে ছুরি মারার সময় অন্যদিকে সরে যাওয়ায় ছুরিটা গিয়ে পরে মুখের ওপর। আর খুনটাও করতে পারলাম না। আর এই বার তুই বা তোর বড় ছেলে যদি বিদেশ আসিস তাহলে তোর ছোট ছেলেকে মাঠের মাঝে নিয়ে খুন করবো। আমাদের কাজে কেউ বাধা দিতে আসবে না। কে কোথা থেকে ছুরি মারবে কেউ বুঝতে পারবে না। কোনো ফল বাগন করতে পারবি না কামরুল। গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবি না । সাবধান কামরুল। 

এভাবেই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটিতে কামরুল লস্কার নামে এক কৃষককে চিরকুট লিখে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই রাতে ওই কৃষকের এক হাজার ড্রাগন ফলের গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার (১৩ এপ্রিল) সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বেড়াশুলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উপজেলার বেড়াশুলা গ্রামের মৃত তোয়াজ লস্কারের বড় ছেলে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী কামরুলের বাড়ির বাথরুমের দেয়ালে হাতে লেখা চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকির বার্তা দিয়েছে কে বা কারা। ড্রাগন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার ৮০ শতক ড্রাগন বাগান। ড্রাগন গাছগুলো দেখতে বেশ সতেজ। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে গাছগুলো নিচ থেকে কাটা হয়েছে। ড্রাগন বাগানের ৪টি লাইনের অর্ধেক করে গাছের নিচ থেকে এক দেড় ফুট উঁচু করে কাটা হয়েছে। তবে কে বা কারা এই ড্রাগন বাগানের গাছ কেটেছে এখনো সনাক্ত করতে পারেনি। তবে গ্রামবাসীর ধারণা একই ব্যক্তি বারবার এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। 

একই বাগানে এর আগেও ২ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার একমাস না পেরোতেই শনিবার মধ্যরাতে কে বা কারা তার ৮০ শতক জমির মধ্যে ২০ শতক জমির (৪টি লাইনের অর্ধেক করে) ১ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে।  

এ বিষয়ে কামরুল লস্কার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে ২ হাজারের বেশি ড্রাগন গাছ কেটে ফেলেছে কে বা কারা। আমার গরুর খাবার পাত্রে বিষ দেওয়া হয়েছে দুইবার। পুইশাকসহ মালটা বাগান কেটে দেওয়া হয়েছে দুইবার। শনিবার দিবাগত রাতে ১ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে ফেলাসহ আমার বাথরুমের ওয়ালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চিরকুট লিখে লাগিয়ে রেখে গেছে। সেখানে আমিসহ আমার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই। 

তিনি বলেন, ২০২২ সালে ৮০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। বাগানে মোট ৮ হাজার গাছ ছিল। যে ড্রাগন গাছ কাটা হয়েছে তার পরিমাণ ২০ শতকের বেশি। বাগানের মাঝ থেকে ৪টি লাইনের অর্ধেক করে কেটে ফেলা হয়েছে। এই ড্রাগন বাগান করেতে এ পর্যন্ত ১৫-১৬ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রথম বছরেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রয় করা হয়েছিল। বাগান থেকে যে ড্রাগন গাছ কাটা হয়েছে সেখানে আনুমানিক ৩-৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি যারা এই ড্রাগন গাছ কেটেছে এবং আমার পরিবারকে চিরকুটের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।

মধুহাটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রহিম বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বেড়াশুলা ব্লকের ড্রাগন চাষি কামরুলের ড্রাগন বাগানের ৪টি লাইনের অর্ধেক করে ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে করে ওই কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ড্রাগন গাছগুলো নিচ থেকে দেড় দুই ফুট উচ্চতা রেখে কাটা হয়েছে। এর আগেও একই জমিতে ২ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ কেটে দিয়েছিল।

মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কামরুল লস্কারের ড্রাগন বাগানে কে বা কারা ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে এবং বাড়ির বাথরুমের দেওয়ালে হাতে লেখা চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকির বার্তা দিয়েছে। এ নিয়ে তিন/চার বার এই ধরনের নেক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে কে বা কারা। প্রশাসনের কাছে আবেদন এই কাজের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। 

ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে কামরুল লস্কার নামে এক কৃষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এমএএস