জমির দখল না ছাড়তে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আতাবুল্লাহ এএএ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তার ভিটেমাটি বিক্রি করেন। তবে বিক্রির বেশ কিছু দিন পরও দখল ছাড়ছিলেন না তিনি।

কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা সময় দেয় জমির দখল ছাড়ার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কথা শুনছিলেন না তিনি। পরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে আর কিছু দিনের সময় প্রার্থনা করেন আতাবুল্লাহ। কিন্তু এবার প্রতিষ্ঠান সময় দিতে নারাজ। ফলে জমি দখলে রাখতে ভিন্ন ফন্দি আঁটে আতাবুল্লাহর পরিবার। তারা অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক সাজান।  

বাসার পাশেই সীমানাপ্রাচীরে মই লাগিয়ে তারা ওঠানামা করার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। পরে রাস্তা বন্ধের নামে অবরুদ্ধ হওয়ার চিত্র ধারণ করে প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুরু হয় তোলপাড়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান খবর নেওয়ার জন্য। এতেই বেরিয়ে আসে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক সাজানোর ঘটনা। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী বলেন, সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়- বর্তমানে কৃষক পরিবারটি যে বাড়িতে রয়েছে সেই বাড়িতে যাতায়াতের ভিন্ন রাস্তা রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া মই দিয়ে একটি পরিবারের ওঠানামা করা, অবরুদ্ধ হওয়া সবই ছিল অভিনয়। 

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক পরিবারটি বিক্রি হওয়া জমির দখল না ছাড়তে এমন নাটক করেছেন। এরপরও উভয়পক্ষকে যার যার মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসার জন্য বলা হলেও অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক করা পরিবারটি আসেনি। ক্রয়সূত্রে জমির মালিক প্রতিষ্ঠানটি তাদের মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র প্রদর্শন করেছে।

 আতাবুল্লাহর বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, এই জমির সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালোনো হচ্ছে। বলা হচ্ছে জমি নাকি আমি দখল করেছি। তবে প্রতিষ্ঠানটি যখন জমি কিনে দখল পাচ্ছিল না তখন আমার কাছে নালিস করেন। আমি তাদের কাগজপত্র দেখে আতাবুল্লাহকে বিক্রি করা জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বলি। এতেই আতাবুল্লাহরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

এএএ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সুকুমার রায় বলেন, সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন দলিলের মাধ্যমে কয়েকটি খতিয়ানে ১৫৯ শতাংশ জমি আতাবুল্লাহ গংরা আমাদের নিকট বিক্রি করেছেন। জমি বিক্রির পর অন্যত্র বাড়ি তৈরির জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন বলে তারা আমাদের নিকট সময় চান। তাদেরকে প্রথম দফায় সময় দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় কিছু মানুষের ইন্ধনে এ জমির দখল ছাড়তে তারা নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করে ফের আরও সময় দাবি করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার স্বার্থে এখনই কাজ শুরুর প্রয়োজন হওয়ায় তাদেরকে বিক্রি করা জমির দখল ছাড়তে বলা হয়। বিভিন্নভাবে বসার পরও তারা সমাধানের পথে না গিয়ে নানাভাবে প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্নভাবে মানববন্ধন করেও অনেককে বিভ্রান্ত করছেন।

এদিকে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক সাজিয়ে তা প্রচারের বিষয়ে অভিযুক্ত আতাবুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  তবে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, পুরো বিষয়টি আমার স্বামী বলতে পারবেন। গতকাল (সোমবার) থেকে তিনি বাড়িতে নেই।
 
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন,বর্তমান সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর। কাউকে অবরুদ্ধ করা মানবিক অধিকার হরণ করার শামিল। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি। বর্তমানে তিনি (আতাবুল্লাহ) যে বাড়িতে রয়েছেন সেখানে প্রবেশের ভিন্ন সড়ক রয়েছে। তিনি মই বেয়ে অভিনয় করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। 

পরে জানা যায়, পুরো ভিটেমাটিই তিনি স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন। আরও কিছুদিন তিনি এখানে থাকার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক সাজান। 

শিহাব খান/আরএআর