বৈশাখের তাপমাত্রা যেন কোনোভাবেই কমছে না। দেখা নেই বৃষ্টির। ভোর থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। দেশজুড়ে চলা গত কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দক্ষিণের জেলা নড়াইলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গরমে দিশাহারা হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে এ সময় চরম বিপাকে পড়েছেন এ জেলার বোরো ধান চাষিরা। তীব্র গরমে মাঠে শ্রমিক সংকট, আর শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের বেশি টাকা দিতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গরমের কারণে ভোর থেকেই ধান কাটা শুরু করছে অনেক চাষি। তবে, বেলা ১১টার পর তীব্র গরমে মাঠে কাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। কিছু সময় কাজ করলেই হাঁপিয়ে উঠছেন। ঘামে পরনের কাপড় ভিজে একাকার। কাজের মাঝে বারবার বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এতে কাজের গতি কমে যাচ্ছে। গরমের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আর শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের পারিশ্রমিক বেশি দিতে হচ্ছে। এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত হলে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তাই তীব্র গরমকে সঙ্গে নিয়েই ধান কাটছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার সাতঘরিয়া এলাকার কৃষক সন্টু সরকার বলেন, শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই নিজে নিজেই ধান কাটছি। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও ধান নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। 

গোপাল রায় নামে এক কৃষক বলেন, গরমে কেউ শ্রম দিতে চায় না। তাই ছেলেদের নিয়ে ভোর ৫টায় মাঠে আসছি ধান কাটতে। বেলা বাড়লে ধান কাটা যায় না। এতো গরম জীবনে কোনোদিন দেখিনি।

গরমে শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা হয় নড়াইল সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আসাদুজ্জামান টনির সঙ্গে। তিনি বলেন, গরমে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এজন্য প্রত্যেককে অবশ্যই সঙ্গ পানি রাখা উচিত। গরমে শরীরে যাতে পানির ঘাটতি দেখা না দেয় এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। 

নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশেক পারভেজ বলেন, বৃষ্টিহীন পরিবেশ থাকলে কৃষকের ধান কাটা থেকে শুরু করে পরবর্তী ধাপে যেতে সহজ হয়। এজন্য এই পরিবেশকে কৃষক ইতিবাচকভাবেই নেয়। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকদের দুপুরের সময়ে মাঠে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

মো. রাজু শেখ/এএএ