খরায় নষ্ট হচ্ছে সমতলের চা বাগান, পাতার অভাবে বন্ধ কারখানা
সারাদেশে টানা তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। এতে জনজীবন ও প্রাণীকুলের নাভিশ্বাস বেড়েছে। তীব্র খরায় সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সমতলের চা বাগানের পাতা মরে যাচ্ছে। পানির অভাবে নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে না। অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে চা বাগানে অতিরিক্ত সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, বাগানে পাতা মরে যাচ্ছে। নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে না। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে আমরা লোকসানে পড়ে যাব। এ দিকে চা বোর্ডসহ কারখানা মালিকরা আশঙ্কা করছেন, চলতি মৌসুমে সমতলে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উত্তরের এ জেলায় তাপমাত্রা কম থাকলেও ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। গরমে চা শিল্প সমৃদ্ধ এ অঞ্চলের চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। এমনিতে গত কয়েক বছর ধরে চা পাতার দাম নেই, তার ওপর অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে বাগানের পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চা বোর্ড সূত্র জানায়, ভালো মানের চা উৎপাদন করতে হলে তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে উত্তরের এ জেলায় সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। যার কারণে অতিরিক্ত গরমে চা গাছে লাল মাকড়সা, লুপারসহ বিভিন্ন পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে চায়ের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত খরচে সেচ দেওয়ার পরও ঝিমিয়ে পড়ছে বাগানের চা গাছ। ফলে চা পাতা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন বাগানে।
সোমবার জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে চা বাগানের গাছের পাতা ঝিমিয়ে পড়েছে। অনেক গাছের কচি পাতাও মরে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন, এমনিতেই চা পাতার দাম নেই। এ কারণে বাগানে পরিচর্যা ঠিকমতো করছেন না। বর্তমানে খরার কারণে পর্যাপ্ত সেচ ও কীটনাশকের অভাবে চা বাগান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতির মুখে সমতলের শতশত ক্ষুদ্র চা চাষি।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় গড়ে উঠেছে ২৯টি চা বাগান। ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষি রয়েছেন ৮ হাজার ৩৭১ জন। এসব চাষিরা সমতলের জমিতে বিভিন্ন পরিমাণে চা বাগান করে চা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। ১২ হাজার ১৩২ একর জমিতে চা সম্প্রসারণে গত বছর ২৮টি চা কারখানায় চা উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। এ উৎপাদন ঘিরে দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। বর্তমানে প্রাকৃতিক কারণে টানা তাপদাহে চা উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া, মাগুড়া, আজিজনগর ও শালবাহান এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি আব্দুস সালাম, আব্দুল করিম, আহসান ও রিপন হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, চলমান তাপদাহের কারণে বাগানের চা গাছ মরে যাচ্ছে। বারবার সেচ দিলেও কিছু সময় পর সেটা শুকিয়ে আবার গাছের পাতা ঝিমিয়ে যাচ্ছে। বাগানের অনেক গাছের পাতা ঝলসে গেছে। নতুন পাতা গজানোর আগেই কুঁকড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক পানি দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। অতিরিক্ত খরচ করে কীটনাশক আর সেচ দিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। শুধু আমাদের খরচ বাড়ছে, চা পাতার দাম বাড়ছে না।
গ্রিন কেয়ার অ্যাগ্রো লিমিটেডের চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুরুল আলম বলেন, পাতার অভাবে কারখানা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে টানা তাপপ্রবাহের কারণে বাগানের পাতা উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে। বাগানের অনেক পাতা মরে যাচ্ছে। সাধারণত এ সময়টা থেকে পাতা উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু কারখানায় চাষিরা পাতা দিতে পারছেন না। পর্যাপ্ত পাতা না পাওয়ায় কারখানা ঠিকমতো চলছে না।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন বলেন, টানা অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ সময়টায় চা উৎপাদনের মৌসুম। অথচ গরমের কারণে বাগানে নতুন পাতা গজাচ্ছে না। বৃষ্টি না হওয়ায় চা বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। চায়ের গাছসহ পাতা কুঁকড়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। পাতার অভাবে এখনো ২৮টি চালু কারখানার মধ্যে অর্ধেকের বেশি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এতে করে আমরা চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছি।
এসকে দোয়েল/এএএ