শহীদ স্মৃতিমিনারের ছবি

আজ ৯ ডিসেম্বর, বুধবার। সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাবনার সাঁথিয়াকে হানাদার মুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে উপজেলার দশটি গ্রামে অবস্থান করা মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হয়, ৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় সাঁথিয়া থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হবে। 

ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সমবেত মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার জয় বাংলা ধ্বনিতে সাঁথিয়া থানা মাঠ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। জাতীয় পতাকা ওঠানোর জন্য সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। জাতীয় সঙ্গীত শেষ হতে না হতেই থানার পশ্চিম দিক কোনাবাড়িয়া গ্রাম থেকে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে পতাকা তোলা বন্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবর্তীণ হয়।

সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সম্মুখযুদ্ধ চলে। পাকবাহিনী ও ম্যালেশিয়ারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটে। পাকবাহিনী আবারও আক্রমণ করতে পারে আশঙ্কায় এলাকার জনগণের সহযোগিতা নিয়ে রাতের মধ্যে কোনাবাড়িয়া, দেবগ্রাম, চকনন্দনপুর, নন্দনপুর, স্বরপ, কান্দাপাড়া, জোড়গাছা  স্থানে বাঙ্কার খনন করা হয়।

সারারাত অভুক্ত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কারে অবস্থান করেন। ৭ ডিসেম্বর সকালে আবার পাকবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো পাল্টা জবাব। ওইদিনে পাকবাহিনীর দুটি গাড়ি ছিনিয়ে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ১২জন সেনাসদস্য নিহত হয় এবং ৩০টির মতো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

৮ ডিসেম্বর ভোর ৬টা। মুক্তিযোদ্ধারা সর্বপ্রস্তুতি নিয়ে স্বরপ, কান্দাপাড়া, জোড়গাছা বাঙ্কারে অবস্থান করে। সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ পাকবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয়া হলো। চলল সম্মুখযুদ্ধ। যুদ্ধ চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। অবশেষে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হয়ে বাঙ্কারেই থেকে গেলেন। নির্দেশ দেয়া হলো শহীদ হয়ে গেলেও কেউ যেন নিজ অবস্থান ও বাঙ্কার থেকে না ওঠে।

৯ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা। স্বাধীনতাকামী জনগণকে নিয়ে সাঁথিয়া থানায় সমবেত হন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা মিলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকা প্রথম সাঁথিয়া থানায় ওড়ান। এরপর পাকসেনারা সাঁথিয়ায় ঢুকতে পারেনি। ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত হয়।

এসপি