লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার জনি মিয়া

মাদারীপুরে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের চিহ্নিত করে বিদেশে মোটা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছে একটি দালাল চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে কিংবা মাফিয়াদের হাতে।

গত সোমবার (০৩ এপ্রিল) থেকে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছেন মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। মাফিয়ারা তাদের নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করছে।

নির্যাতিতরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের শাহিনের ছেলে জনি মিয়া, হাবু হাওলাদারের ছেলে হিফজু হাওলাদার, সরদার কান্দী গ্রামের আলা খার ছেলে মো. আশাদুল খান ও রিপন আকনের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম। বাকি ১৯ জনের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। মাফিয়াদের লোকজন তাদের নির্যাতন করে পরিবারের কাছে বলতে বাধ্য করছে- টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এতে পরিবারের লোকাজন আতঙ্কে রয়েছে।

জানা গেছে, চাছার গ্রামের ছাবু খানের ছেলে জাহিদ খান ইউছুফ এলাকার পরিচিত দালাল। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে তিনি মানবপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার মাধ্যমে প্রায় ৩০০ যুবক লিবিয়ায় গেছেন। পরে অনেকেই সাগর পথে ইতালি পাড়ি জমিয়েছেন। এসব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের সংগ্রহ করা। প্রত্যেকের সঙ্গে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকায় চুক্তি করা হয়। রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঢাকা টু লিবিয়া। তারপর সেখান থেকে ইতালি। জাহিদ খানের মাধ্যমে মাদারীপুরের যে সব যুবক লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকেই এখনও ইতালি যেতে পারেনি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছেন। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।  

নির্যাতনের শিকার হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুফের মাধ্যমে গত দুই মাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সঙ্গে আমার ৮ লাখ টাকা চুক্তি হয়। ২ লাখ টাকা আমি ইতোমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই দিন ধরে আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে। আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই। এ ব্যাপারে জাহিদ খান আমাকে বলেছে- আমি আপনার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।

তবে যোগাযোগ করা হলে জাহিদ খান ইউসুফ বলেন, আমি কোনো লোক পাঠাইনি। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান মৃধা বলেন, আমি জাহিদকে চিনি। তবে সে যে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত তা জানাছিল না। আমার ইউনিয়নের কিছু লোকসহ মাদারীপুরের ২৪ জন লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে বন্দি রয়েছে- এ বিষয়ে আমি অবগত না।

মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত জানতে তদন্ত কর্মকর্তাকে চাছার গ্রামে পাঠানো হয়েছে। 

নাজমুল মোড়ল/আরএআর