ঈদের দিন ‘গোস্ত-ভাত’ খাবে ১৫২ পরিবার
বছর ঘুরে আসে ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। কি ধনী, কি গরিব-কারো ঘরে আনন্দের কমতি থাকে না এ দিনে। পার্থক্য কেবল উদযাপনে। নতুন জামা-জুতা ছাড়াও খাবারের নানা আয়োজন চলে বৃত্তবানদের ঘরে ঘরে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে অসহায় ও নিম্নবিত্তরা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি এ বৈষম্য বাড়িয়েছে আরো।
অনেকেই দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতেই গলদঘর্ম হন। তাদের কাছে ঈদ আসে অনেকটা সাদামাটা হয়ে। কিন্তু এবার রাজশাহী নগরীর এমন ১৫২ পরিবারের ঈদের দিনটি রঙিন করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জিরো’।
বিজ্ঞাপন
এ পরিবারগুলো ঈদের দিন গোস্ত-ভাত খাবে। বুধবার (১২ মে) ১২২ পরিবারে এক কেজি করে গরুর গোস্ত এবং ৩০ পরিবারকে আধা কেজি করে খাসির মাংস পৌঁছে দিয়েছেন টিম জিরোর সদস্যরা।
গরুর গোস্ত পেয়ে খুশি অসহায় পরিবারগুলো। তাদের ভাষ্য, করোনায় আয় কমেছে অনেকাংশে। দ্রব্যমূল্যের বাজার চড়া। বাজারে যে কোনো মাংসের দাম বাড়তি। ব্রয়লার মুরগির কেজিও দেড়শ টাকার ওপরে। সেখানে সাড়ে ৫০০ টাকায় এক কেজি গরুর গোস্ত কিংবা ৭০০ সাড়ে ৭০০ টাকায় খাসির মাংস কেনা কঠিন।
বিজ্ঞাপন
গতবার ঈদের দিনে সন্তানদের পাতে গরুর গোস্ত তুলে দিতে চেয়েছিলেন নগরীর রিকশা চালক মকবুল আলম। কিন্তু আয় না থাকায় পারেননি। এবার সেই আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। শেষে টিম জিরোর সদস্যরা তার বাড়িতে গরুর গোস্ত পৌঁছে দিয়েছেন। এতে তিনি আবেগাপ্লুত। সন্তানদের নিয়ে ঈদের দিন হলেও গরুর গোস্ত দিয়ে ভাত খাবেন এ রিকশাচালক।
একই অভিব্যক্তি নগরীর গৃহকর্মী আসমা বেগমের। তিনি জানিয়েছেন, কুরবানির ঈদে গরুর গোস্ত দিয়ে যান বৃত্তবানরা। কিন্তু রোজার ঈদে পাতে গরুর গোস্ত তুলবেন এটি ছিল একেবারেই কল্পনার বাইরে। টিম জিরোর দেয়া গরুর গোস্ত রান্না করে পরিবার নিয়ে ঈদের দিন ভরপেট ভাত খাবেন তিনি।
টিম জিরোরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করা আবু ইসমাইল সিদ্দিকী। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোলাম তৌসিফ, রিফাত জাহিদ, আহমেদ ইশতিয়াক, হুসনী মাহদী সেঁজুতি শাবীন প্রমুখ। তারা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তারা জানিয়েছেন, তারা চেয়েছেন ঈদের দিন অসহায় কিছু মানুষের পাতে গরুর গোস্ত তুলে দিতে। এ নিয়ে অনলাইন ক্যাম্পেইন চালানো হয়। তাতে যে অর্থ সংগ্রহ হয় তা দিয়েই কেনা হয় একটি গরু ও খাসি। টিম জিরোর সদস্যরা নিজেরাই পশু জবাই করে মাংস প্যাক করেন। পরে বেছে বেছে একেবারেই অসহায় কিছু পরিবারের মাঝে এ মাংস বিতরণ করা হয়েছে। এর আগেও সেবামূলক নানান কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে টিম জিরো।
২০২০ সালের ২৫ শে মার্চ যাত্রা শুরু করে টিম জিরো। এরপরই দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা সংক্রমণ। গত বছর লকডাউন চলাকালে প্রায় ৫ হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে। ছয় শতাধিক মানুষের মাঝে বিতরণ করেছে ইফতার। অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৮০ হাজার টাকার এককালীন শিক্ষাবৃত্তি প্রদাণ করেছে জিরো। পথশিশুরা পেয়েছে ঈদের কাপড়।
সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, লকডাউনে যখন দুর্বিষহ জনজীবন তখন রাজশাহী শহরের এইচএসসি'১৫ ব্যাচের কিছু উদ্যোমী তরুণ একজোট হয়ে এগিয়ে আসেন মানুষের কল্যাণে। একেবারেই শূন্য হাতে মানুষের জন্য কাজে নেমে পড়েন তারা।
শুরুতেই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ খোলেন। গ্রুপটির নাম দেন "জিরো"। স্বপ্নবাজ এসব তরুণ চেয়েছিলেন কঠিন অবস্থায় শহরের মানুষের পাশে থাকতে। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন এইচএসসি ১৬ ও ১৭ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী। বেড়ে যায় উদ্যম।
বর্তমানে সাড়ে চার হাজার মানুষকে নিয়ে তাদের ফেসবুক গ্রুপ জিরো-লেটস ফাইট ফর দেয়ার স্মাইল। তাদের এ কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন কিছু মানবিক মানুষ। এরই মধ্যে অসহায় মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে টিম জিরো। অসহায় মানুষের সেবায় সমাজের বিত্তবানদের নিজ অবস্থান থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান টিম জিরোর।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস