ঈদের দিনে ঘাঘট নদী সংলগ্ন প্রয়াস সেনা পার্ক এলাকায় মানুষের ঢল

ঈদের দিন থেকেই ভ্যাপসা গরম। তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ছাতা ছাড়া বাইরে বের হওয়া অসহনীয়। এমন অসহ্য গরমেও থেমে নেই ঈদ আনন্দ। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় উন্মুক্ত দর্শনীয় স্থানগুলোতে বেড়েছে মানুষের ভিড়। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে রঙিন হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থানগুলো।

ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। গরম উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের উল্লাসে প্রাণ ফিরেছে জনসমাগমশূন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে। সঙ্গে আছেন অভিভাবকরা। সবমিলে গরমও হার মেনেছে ঈদ আনন্দের কাছে।

ঈদুল ফিতরের দিন শুক্রবার (১৪ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরের নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদী, রংপুর টাউন হল চত্বর, কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টজুড়ে ছিল মানুষের ঢল। ঈদের দিনে এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

মহিপুর তিস্তা সেতুতে মানুষের ঢল 

সন্ধ্যার পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, কারমাইকেল কলেজ রোড লালবাগ মোড়, শাপলা চত্বর মোড়, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, ক্যান্ট পাবলিক কলেজ সংলগ্ন ফ্লাইওভার, আরএএমসি শপিং সেন্টার চত্বরসহ নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়।

করোনা সংক্রমণরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, রংপুর শিশুপার্ক, কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, রংপুর জাদুঘর, তাজহাট জমিদার বাড়ি, সিটি চিকলি পার্ক, ভিন্নজগত, আনন্দনগরসহ রংপুরের ছোট-বড় বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এ কারণে উন্মুক্ত দর্শনীয় স্থানগুলো এখন সব বয়সী মানুষের ঈদ উদযাপনের খোরাক জোগাচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন শনিবারও (১৫ মে) দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে।

কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পাড়ে সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে ভিড় জমালেন দর্শনার্থীরা

শনিবার দুপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নিসবেতগঞ্জের ঘাঘট নদীর তীরে রক্ত গৌরব চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্কে তালা ঝুলছে। কিন্তু ঘাঘট নদীর অংশ বিশেষসহ পাশের এলাকায় সবুজের সাজানো কোলাহল মুক্ত পরিবেশে মানুষের ঢল নেমেছে। পার্ক বন্ধ থাকলেও ঘাঘটের আশপাশ ঘুরে দেখতে ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা।

রংপুর নগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু। এটি জেলার শতবর্ষী একটি পুরাতন রেল সেতু। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতুর পাশে ২০১২ সালে তিস্তা সড়ক সেতু তৈরি করা হয়। সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা তিস্তা নদীর তীরে আড্ডার আসর বসিয়েছে। ঈদকে ঘিরে তিস্তা রেল সেতুর নিচ থেকে গোধূলিলগ্নের অপরূপ রূপের অবলোকন আর একটু স্বস্তির বিনোদন পেতে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের ভিড় বেড়েছে।

একই চিত্র গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে। তিস্তা নদী বেষ্টিত এই ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। সেতুর নিচে একপ্রান্তে পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। সেতুর আরেক প্রান্তে বিশাল বালুচর। মনোরম পরিবেশে নদীর বুকে পাল তোলা নৌকায় ঘুরছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ বালুচরে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।

ঘাঘট ব্রিজের কোলঘেঁষে মানুষের ঢল

মহিপুর ঘাটে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মিঠাপুকুর উপজেলার সেলিম মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। শিশু-কিশোররা বেশ আনন্দ করছে। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো সুযোগ নেই। এত বেশি ভিড় হবে জানলে ঈদের পরই আসতাম।

তিস্তা রেল সেতুতে দলবদ্ধভাবে ঘুরতে আসা লাভলু, পিংকি, নাঈম, সিরাত, সুরাইয়া ও সাকিব ঢাকা পোস্টকে জানান, রংপুরে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিন্নজগত বন্ধ রয়েছে। গতবার করোনার কারণে ঘুরতে বের হতে পারেননি। এ কারণে এবার গরমের মধ্যেও আনন্দ আড্ডা থেমে নেই। সবাই মিলে খুব মজা করছেন তারা। নদীর শীতল পানি, ডিঙি নৌকার ছোটাছুটি, দুটি সেতুর নিচের মনোরম পরিবেশ বেশ উপভোগ্য।

কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেল সেতুতে দর্শনার্থীরা

রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতেই সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চিড়িয়াখানাসহ বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্র খোলা থাকলে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঈদে বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও মানুষ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এসব জায়গাতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এএম