করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশের মতো সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পর্যটন এলাকাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। তবে ঈদের ছুটিতে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার পর্যটন এলাকাগুলো। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা এসব পর্যটকেরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি, নেই প্রশাসনের নজরদারিও।

শনিবার (১৫ মে) সরজমিনে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, বরগোপ টিলা (বারেকের টিলা), জাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানে পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে। এই এলাকাগুলোর মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় শহীদ সিরাজ লেকে। ঘুরতে এসে পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মুখে মাস্ক ও শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। অনেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তে গিয়ে ভিডিও ধারণ এবং সেলফি তুলেছেন। করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন ঘুরতে এসেছেন? পর্যটকদের কাছে এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা পোস্টের।

পর্যটকরা বলছেন, তারা জানেন দেশে করোনার পরিস্থিতি খারাপের দিকে। তবে ঈদের ছুটিতে না ঘুরলে ভালো লাগে না। তাই দলবল নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন।

শহীদ সিরাজ লেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শরীফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ি বরিশালে। সুনামগঞ্জ শহরে থাকি। নিজের মোটরসাইকেলে করে জেলা শহর থেকে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে নিলাদ্রীতে ঘুরতে এসেছি। পরিবার অনেকদিন ধরে বলছিল কোথাও ঘুরে আসার জন্য। তাই ঈদের সুযোগটা কাজে লাগালাম। তবে বৃষ্টি এসে কিছুটা নষ্ট করে দিয়েছে আনন্দ। বৃষ্টি না হলে আরও ভালো লাগত। 

পর্যটক রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে এখানে বেড়াতে এসেছি। এখানে করোনা রোগী নেই। ভারতে করোনা রোগী যে রকম দেখা যাচ্ছে, আমাদের সুনামগঞ্জে সেরকম দেখা যাচ্ছে না। সুনামগঞ্জে কেউ মানেনও না এসব স্বাস্থ্যবিধি। তাই সবাই মিলে এ জায়গায় ঘুরতে এসেছি।

সিলেট থেকে সিরাজ লেকে ঘুরতে এসেছেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবার মুখে আগে শুনেছি এ জায়গাটি অনেক সুন্দর। তাই অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিল এখানে আসার। আল্লাহ সে ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আসার পর অনেক ভালো লাগছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোভ সামলাতে পারিনি, আবেগ থেকে চলে এসেছি। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘুরছি। অসুবিধা হচ্ছে না।

জামালগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাকা আক্তার। মা-বাবার সঙ্গে তিনিও ঘুরতে এসেছেন। তাদের কারও মুখে মাস্ক ছিল না। সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের সীমান্তে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, এখানে আসা নিষেধ আমি জানি। ঘুরতে ইচ্ছে করছিল, তাই এসেছি। আপনার মাস্ক নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মাস্ক আছে। ব্যাগে রেখেছি।

সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জুনিয়র প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন মো. আবু ইউসূফ ও মেহেদী হাসান লিটন। তারা বলেন, আমরা এবার ঈদে ছুটি পাইনি। বাড়ির মানুষের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পারিনি। সে খারাপ লাগা ভুলতে এখানে এসেছি। নিলাদ্রীতে এসে অনেক ভালো লাগছে।

তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুই প্রকৌশলী বলেন, এতক্ষণ মাস্ক পরেই ছিলাম। এখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য এখন মাস্ক খুলে রেখেছি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি।

বিশ্বম্ভরপুর থেকে আসা পর্যটক মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। অনেক পর্যটক এসেছেন এখানে। তাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এতে অনেক আনন্দ লাগছে। আপনার মুখে মাস্ক নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার কেউ মাস্ক ব্যবহার করে না। তাই আমরাও ব্যবহার করি না।

জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ ঢাকা পোস্টকে বললেন, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পর্যটন এলাকাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে কেউ যেন এ এলাকায় ঘুরতে না আসে সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। 

এসএসএইচ