ঘাটে নোঙর করে রাখা হয় মাছ ধরা ট্রলার

২০ মে মধ্যরাত থেকে দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও বংশ বিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা পালনে প্রস্তুতি নিয়েছেন উপকূলের জেলেরা। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মাছ ধরা ট্রলার উপকূলের বিভিন্ন নদী-খালে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

তবে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর ৬৪ দিনের অবরোধের কারণে কষ্টে জীবনযাপন করতে হবে সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার বিস্তীর্ণ উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে এখন দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

জানা গেছে, সামুদ্রিক মাছের বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণে মৎস্য আহরণে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। বছরজুড়ে ইলিশের আকাল; তার ওপর মৎস্য বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। তবে নিষিদ্ধকালীন ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন বন্ধ ও অপ্রতুল খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।

এমনিতেই করোনাকালে তাদের রোজগারে টান পড়েছে। তার ওপর সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কীভাবে সংসার চলবে? এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন তারা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেরা খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল পান। চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও দাবি তাদের।

পুরোনো জাল মেরামত করছেন জেলেরা

মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটাসহ উপকূলের মাছ ধরার ট্রলারগুলোর অধিকাংশই নিরাপদ স্থানে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ট্রলার থেকে জাল তুলে নিরাপদে রাখছেন তারা। মাছের আড়তগুলোয় ধোয়ামোছার কাজ চলছে। অবরোধকালীন জেলেরা ট্রলার মেরামত, নতুন জাল প্রস্তুত ও পুরোনো ছেঁড়া জাল বুনবেন।
   
আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলে নবী হোসেন বলেন, ‘আমরা বরাবরই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মাছ শিকার বন্ধ রাখি। এবারও অবরোধ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। মাছ ধরা ট্রলার ঘাটে নোঙর করে জাল তুলে নিরাপদে রেখেছি।’

ট্রলার মাঝি রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা সরকারের আইন মেনে মাছ ধরা বন্ধ রাখব। তবে আমাদের খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন বন্ধ করতে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকে সমুদ্রে পাহারা জোরদার করতে হবে। তাহলে আমরা সুফল পাব।’ 

ট্রলার মালিক দুলাল হাওলাদার বলেন, ‘বছরজুড়ে ইলিশের আকাল ছিলো। প্রত্যেক ট্রলার মালিক দেনাগোস্ত হয়ে পড়েছেন। তারপরও আমরা সরকারের আইন নামতে বাধ্য। ভারতীয় জেলেরা যদি মাছ ধরা বন্ধ না করে তাহলে অবরোধের সুফল আমরা পাব না।’

মৎস্য বিভাগ জানায়, অবরোধকালীন কলাপাড়া উপজেলার ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলেকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হবে। তবে অবরোধ অমান্য করে সমুদ্রে মাছ শিকার করলে ২০২০ সালের মৎস্য আইন অনুযায়ী যে পরিমাণে মাছ ধরবে সেই সমপরিমাণে মাছের মূল্যের জরিমানা করা হবে।

নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করলে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাগার প্রদান করা হবে। কোনো আড়তদার মাছ মজুদ করলে অভিযুক্তকে জেল এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে বলে মৎস্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে।

অবরোধ সফল করতে সমুদ্রে কিংবা মৎস্য বন্দর এলাকায় কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতর সোচ্চার থাকবেন। জেলেদের খাদ্যসহায়তা নিশ্চিতের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অবরোধ সুফল বয়ে আনবে এমনটি প্রত্যাশা মৎস্য বিভাগের।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘অবরোধ পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সভা করে সচেতন করা হয়েছে। জেলেসহ ব্যবসায়ীদের সব দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

এমএসআর