উপজেলা পশু হাসপাতালে ৯ পদের ৮টিই শূন্য
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ পশু হাসপাতালে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকলেও তার ৮টি পদই শূন্য।
২০১০ সালে ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে কালুখালী উপজেলা গঠিত হয় এবং ২০১৫ সাল থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে হাসপাতাল চালুর এক যুগ পরও বাড়েনি চিকিৎসা সেবার মান।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, কালুখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি সার্জন, উপ-সহকারী সম্প্রসারণ, উপ-সহকারী করিম প্রজনন, উপ-সহকারী প্রাণী স্বাস্থ্য, উপ-সহকারী লাইভ স্টক অ্যাসিস্টেন্ট, অফিস সহকারী, ড্রেসার ও অফিস সহায়ক এই ৯টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন শুধুমাত্র উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। তবে প্রকল্পে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন পশু লালন-পালনকারী বা খামারি তাদের অসুস্থ পশু নিয়ে আসেন। বর্তমানে এই উপজেলার অসুস্থ গৃহপালিত পশু-পাখিদের চিকিৎসার এখন একমাত্র ভরসা প্রকল্পের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ দায়িত্বে না থাকায় জরুরি প্রয়োজন বা চিকিৎসার কাজে তিনি হাসপাতালের বাইরে গেলে বন্ধ থাকে চিকিৎসা সেবা। এ অবস্থায় ভেটেরিনারি সার্জনসহ শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে সেবার মান বাড়ানোর দাবি সেবা গ্রহীতাসহ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্তদের। এখানে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছাড়া সবাই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মরত আছেন। ফলে লোকবল কম থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালের কয়েকজন সেবা গ্রহীতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, হাসপাতালে লোকবল কম থাকায় ভালো সেবা পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় অসুস্থ গরু-ছাগল নিয়ে এসে ডাক্তারের জন্য বসে থাকতে হয়। লোকবল বেশি হলে আমরা উপকৃত হব।
হাসপাতাল প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইভ স্টক সার্ভিস প্রোভাইডর রিয়াজ মন্ডল বলেন, এখানে শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তা রয়েছে। বাকি সবগুলো পদ শূন্য। এখানে প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. মমতাজুল হকের পরামর্শে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অসুস্থ প্রাণীর চাপ বেশি থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি সময় মতো দুপুরের খাবারও খেতে পারছেন না। প্রকল্প চালু না থাকলে কালুখালীতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসা হতো না।
প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. মমতাজুল হক বলেন, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে ভেটেরিনারি সার্জনের পদ শূন্য থাকায় প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক হিসেবে আমি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। অসুস্থ প্রাণীর চাপ বেশি থাকায় একার পক্ষে সেবা দেওয়া কষ্টকর। অনেক সময় বড় প্রাণীদের হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। তখন হাসপাতাল ফাঁকা থাকে। হাসপাতালে দুই থেকে তিনজন ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে উপজেলাবাসীসহ তাদের সবার জন্য ভালো হতো।
কালুখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম রতন বলেন, আমি কিছু দিন আগে এখানে যোগদান করেছেন। এখানে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও আমি একাই কর্মরত আছি। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে ভেটেরিনারি সার্জনসহ অন্য পদগুলো শুন্য থাকার পরও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে সাময়িকভাবে সেবা অব্যাহত রাখলেও অনেক সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এখানে প্রকল্পের সবাই দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, দিন দিন রাজবাড়ী জেলায় প্রাণিসম্পদের খামার লালন পালনকারী বৃদ্ধি পেলেও সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোতে প্রতিটি উপজেলায় জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে কালুখালীতে একটু বেশি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করেছেন এবং কিছু দিন আগে এখানে ঢাকা বিভাগের পরিচালক পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করছেন ৪১তম বিসিএস এর নিয়োগের মাধ্যমে কালুখালীতে ভেটেরিনারি সার্জনের পদটি পূরণ হবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে