হাফিজুর রহমান

গত ১৫ মে সকালে ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে মাকে বলেছিলেন, ‘একটা কাজে যাচ্ছি, দুই-একদিন পরেই ফিরে আসব’। কিন্তু ছেলে না ফেরায় দীর্ঘ হতে থাকে মায়ের অপেক্ষা। অবশেষে ছেলে ফিরেছে; তবে নিথর দেহে, বিষাদের পাহাড় নিয়ে। 

রোববার (২৩ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় কফিনবন্দি হয়ে শেষবারের মতো হাফিজ ফিরেন তার মায়ের কাছে। ছেলেকে এভাবে ফিরে পাবেন, সেটি কল্পনাতেও ছিলনা মা শামছুন্নাহারের। বাবা মজিবুর রহমানও ছেলের শোকে বিহ্বল।

গত ১৬ মে থেকে নিখোঁজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের মেধাবী ছাত্র হাফিজুর রহমানের (২৪) মরদেহ মিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। গতকাল রোববার (২৩) মর্গে হাফিজের মরদেহ শনাক্ত করেন তার বড়ভাই হাবিবুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের খাড়েরা গ্রামের মজিবুর রহমান ও শামছুন্নাহার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন হাফিজ। সোমবার ভোর পৌনে ৪টায় বাড়ির কবরস্থানে হাফিজকে দাফন করা হয়। 

পুলিশ জানায়, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজেই নিজের গলা কাটেন হাফিজ। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানে ওইদিন রাতেই হাফিজের মৃত্যু হয়। এরপর হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাত হিসেবে রাখা হয় তার মরদেহ। তবে কেন হাফিজ এটি করেছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না কেউ। পরিবারের লোকজনও হাফিজের এমন আচরণের কারণ জানে না।

হাফিজের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হাফিজের বাবা বাড়ির পাশে একটি মসজিদে ইমমাতি করতেন। আর মা শামছুন্নাহার গৃহিণী। বড় ভাই হাবিবুর রহমান একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। হাফিজ খাড়েরা মোহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৫ সালে সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন হাফিজ। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন তিনি। গ্রামের সাধারণ স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলের ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে আনন্দে আত্মহারা ছিলেন বাবা-মা। বাবা মজিবুর রহমান মানুষকে গর্ব করে বলতেন, আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

হাফিজের বড়ভাই হাবিবুর রহমান জানান, ১৫ মে সকালে ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন হাফিজ। দুপুরে ফোন করে ঢাকায় পৌঁছানোর খবর জানান। ওই দিন সন্ধ্যায়ও মায়ের সঙ্গে মোবাইলফোনে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন। কিন্তু তখনও হাফিজ কোনো বিপদ কিংবা সমস্যায় আছেন বলে জানাননি। কেনো তার ভাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেটি বুঝতে পারছেন না হাবিব।

তিনি বলেন, কারও সঙ্গে হাফিজের কোনো ঝগড়া-বিবাদ ছিল না। পুরো ক্যাম্পাসে তাকে সবাই ভালো ছেলে হিসেবে জানে। সবার মুখে তার প্রশংসা শুনেছি। কাজে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়। বলেছিল দুই-একদিনের মধ্যে আবার চলে আসবে। কিন্তু ১৬ মে থেকে হাফিজের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় কসবা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই একটি গ্রামের কলেজে পড়ালেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সবাই এটি শুনলেই হা করে তাকিয়ে থাকত। তাকে নিয়ে আমাদের সবারই অনেক স্বপ্ন ছিল। আবার বাবা খুব গর্ব করে মানুষকে বলত- আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ও বিসিএস ক্যাডার হবে, ভালো কিছু করবে।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর