দুর্যোগ এলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা
দুর্যোগ আসলেই ঘরে বসে থাকতে পারেন না তারা
চেহারায় স্পষ্ট বয়সের ছাপ। আগের মতো ছুটাছুটি করতেও পারেন না শাহাদাত হোসেন ঢালী। তবে কোনো দুর্যোগ আসলেই যেন আর ঘরে বসে থাকতে পারেন না তিনি। হাতে তুলে নেন হ্যান্ডমাইক। উপকূলজুড়ে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেন। এভাবেই চলছে শাহদাত হোসেনের ৩৩ বছর।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ শাহাদাত হোসেন ঢালী। নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকায় মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত ৮টার দিকে ইয়াসের সতর্কতামূলক প্রচারণাকালে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। গায়ে লাইভ জ্যাকেট, ঘাড়ে ব্যাটারি আর হাতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে প্রচার কাজ করছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
শাহাদাত হোসেন ঢালী ঢাকা পোস্টকে জানান, ১৯৮৮ সালে ঝড়ের সময় থেকেই আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন প্রচুর ঝড় হয়েছিল। অনেক মানুষের সহযোগিতা করেছিলাম। তখন যুবক ছিলাম। এখন বয়স হয়েছে আগের মতো আর ছুটাছুটি করতে পারি না। তবে ঝড় আসলে বা কোনো দুর্যোগ আসলে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ছুটে যাই।
তিনি বলেন, নৌকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া পর্যন্ত শিশু বৃদ্ধের হাত ধরে কোলে করে নিতে হয় অনেক সময়। বিপদের সময় তাদের পাশে তো আমাদের দাঁড়াতে হবে। এভাবেই ১৯৮৮ সালের পর থেকে যতগুলো ঝড় উপকূলীয় এলাকায় এসেছে, আমি কাজ করেছি। আমার ভালো লাগে মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে।
বিজ্ঞাপন
শাহাদাত হোসেন ঢালী আরও বলেন, আইলা, সিডর, নারগিস, ফণি, বুলবুল, আম্পান এগুলোর সময় আমরা অনেক কষ্ট করেছি। এ কষ্ট কোনো কষ্ট নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই আমার আনন্দ লাগে। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকেই এগুলো করি। বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি হয়। বর্তমানে আমি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছি।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিসিআরসি) আরেক সদস্য একই এলাকার স্বেচ্ছাসেবী আবু বেলাল ঢালী বলেন, আমরা একসঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়াই। দুর্যোগ আসলেই ঝাঁপিয়ে পড়ি, মানুষের জন্য। একাজে আরও রয়েছে আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, গাজী আব্দুল হাকিম মাস্টার, অজেত আলী মোল্লা, শহর আলী সরদার। একত্রে ছয়জন মিলে কাজ করি।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবের কথা জানিয়ে স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, আমাদের রেইনকোর্ট, টর্স লাইট, হেলমেট, কাদায় চলার জন্য বুট পেলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে সেগুলো কেউ দেয় না। আমরা টাকা চাই না, আপদকালীন দরকারি জিনিসগুলো পেলে উপকার হয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজে সুবিধা হবে। বিভিন্ন সংস্থা আসে কিন্তু এসব কেউ দেয় না।
আকরামুল ইসলাম/এমএসআর