ঝড় মানে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। ঝড় মানে ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির শঙ্কা। কিন্তু এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে স্বজন হারানোর শঙ্কা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নেই উপকূলের লাখো জেলেবধূর।

নদী ও সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ সমৃদ্ধির জন্য সরকারের আরোপ করা ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এবার উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে না গিয়ে তীরে অবস্থান করায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে প্রিয় স্বজনের প্রাণহানির শঙ্কা থেকে মুক্ত জেলেবধূরা।

উপকূলীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরই এই প্রথম এমন সময় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে যখন সমুদ্রে কোনো জেলে নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরা থেকে বিরত থেকে বাড়িতে অবস্থান করায় সমুদ্রশূন্য জেলে। এ কারণে জেলেপত্নীরাও চিন্তামুক্ত।

বরগুনা জেলার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের আগাম বার্তা পেয়ে জেলেরা তীরে ফিরে আসতে পারলেও অনেক জেলে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আবার ঝড়ের ১৫ থেকে ২০ দিন পর সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় জীবিত জেলে উদ্ধার করা ঘটনাও রয়েছে।

অতীতের বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়েছে উপকূলের লাখো জেলেপত্নীর। কারো স্বামী, কারো সন্তান আবার কারো স্বজনের তীরে ফিরে আসা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কেটেছে তাদের। কিন্তু এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় চিন্তামুক্ত জেলেবধূরা।

বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা জেলে আবদুস সালাম (৫০) বলেন, অতীতের বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্র থেকে তীরে ফেরার তাড়া ছিল। কখনো কখনো আবার তীরে ফিরতে না পেরে সুন্দরবনসহ উপকূলের বিভিন্ন খালে আশ্রয় গ্রহণ করেছি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার যেমন স্ত্রী সন্তানদের কথা মনে পড়ত, ঠিক তেমনি তারাও আমার জন্য কান্নাকাটি করতো। কিন্তু ইয়াসে আমাকে নিয়ে এখন আর কারো কোনো শঙ্কা নেই।  

একই এলাকার জেলেবধূ কল্পনা বেগম (৪৫) বলেন, এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে আমার স্বামী বাড়িতে ছিল না। মাছ ধরতে সমুদ্র যাত্রা শুরু করার পর আমরা বাড়িতে বসে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির খবর পেতাম।

তিনি বলেন, জেলেরা সমুদ্রের এতটাই গভীরে মাছ ধরতে যায় যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও কোনো উপায় থাকে না। তাই ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার স্বামীর জন্য খুব চিন্তা হতো। ছেলে মেয়ে নিয়ে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্পও ছিল না। কিন্তু এ বছর নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বামী বাড়িতেই আছেন। তাই আমি শঙ্কামুক্ত।

পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের জেলেবধূ নাজমা বেগম (৩০) বলেন, এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে আমার স্বামী বাড়িতে ছিল না। ওই সময় তার জন্য খুব চিন্তা হতো। দুশ্চিন্তায় ঘুমতো দূরের কথা, নাওয়া-খাওয়াও ছিল না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুশ্চিন্তার পাশাপাশি কান্নাকাটি করা ছাড়া কোনো বিকল্পও ছিল না।

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় জেলেপল্লীগুলোতে কান্নার রোল পড়ে যায়। নানা শঙ্কা আর দুশ্চিন্তায় দিন পার করেন জেলেদের স্ত্রী-সন্তান। কিন্তু এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় জেলেরা বাড়িতে অবস্থান করছেন।

কোস্টগার্ডের বরগুনার পাথরঘাটা স্টেশনের কমান্ডার লে. ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, ২০ মে থেকে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সরকারের এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে কোস্টগার্ড। এ কারণে নদী ও সমুদ্রে কোনো জেলে আছে বলে আমাদের জানা নেই

এমএসআর