হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে বক্তব্য দেওয়ায় কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সেই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ মে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম এএসআই গোলাম রাব্বানীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর গোলাম রাব্বানী কুষ্টিয়া শহরের রাস্তায় রাস্তায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন। চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার তিন দিন পর গত বুধবার (২৬ মে) গোলাম রাব্বানীকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে সদ্য নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের কাছে দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। 

অনেকেই সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য মুঠোফোনে ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করলে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি,পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত অবস্থায় ৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় গোলাম রাব্বানী র‌্যাব-পুলিশকে বিষোদগার করে বক্তব্য দিচ্ছেন। 

ওই সময় গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আল্লাহ আপনার জন্য যথেষ্ট। কোরআন হাতে নেন, র‌্যাব-পুলিশ সব দৌড় মারবে। দেখেন আপনারা আল্লাহকে ছুঁলে কি হয়? মুসলমানের কাছে দাঁড়ান। র‌্যাব-পুলিশ, এসপি কাউকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রকৃত মুসলিম কাউকে ভয় পায় না। মানুষকে মানুষ ভয় পাবেন না। এই জান-মাল, ইজ্জত, ধর্ম, স্ত্রী, পুত্র-সন্তান সব বিসর্জন দেব আল্লাহর জন্য। পোশাক পরে কথা বলেছি, এটাও পোশাক, ওটাও পোশাক। চোরকে চোর বলা পুলিশের দায়িত্ব। ডাকাতকে ডাকাত বলা পুলিশের দায়িত্ব। আলেমকে আলেম বলা পুলিশের দায়িত্ব।’ 

মোবাইল ফোনে নিজের পুলিশের পোশাক পরা ছবি দেখিয়ে জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এই দেশে এত মুসলমান কারো চাকরি যায়? আইনের কথা বলার দরকার নেই। আইন এগুলো মানুষের বানানো। রবের পক্ষ থেকে কোরআন নাজিল হয়েছে। সবাইকে কোরআন মানতে হবে। এই পোশাক আমার গায়ে ছিল। আমি কি এখন পুলিশ দাবি করছি? তিন দিন আগে আমার চাকরি চলে গেছে।’ 

বক্তব্য চলাকালে স্থানীয় একজন দোকানদার গোলাম রাব্বানীকে থামানোর চেষ্টা করেন। সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময় তাকে চরম উত্তেজিত হতে দেখা যায়। 

ওই ব্যক্তিকে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমি চলে যাব কেন? এটা আমার সার্বভৌম। এটা মায়ের জন্মভূমি। আমাকে অ্যারেস্ট করুক। আমিতো আমাকে অ্যারেস্ট করতেই বলতেছি। আমি দুই বার সাব ইন্সপেক্টর পাস করা। অ্যারেস্ট করেন। আমি আমার জান-মাল দিয়া দিছি।’

বক্তব্যের শেষ দিকে এসে তিনি বলেন, ‘এই এলাকার সব লোকজন জানবে একজন মুসলমান ছিল। জীবন দিয়ে গেছে। জীবন দিয়া যাব। প্রকাশ্যে গুলি করবে? গুলি লাগা। বহুত ফুটাইছি আমি। অস্ত্রকে মুসলমান ভয় পায় না।’

গোলাম রাব্বানীর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকায় বাসা ভাড়া থাকেন। তিনি কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। 

গত ৩ এপ্রিল এএসআই গোলাম রাব্বানী পুলিশের পোশাক পরে ফেসবুক লাইভে আসেন। পরে তার লাইভটি ভাইরাল হয়ে যায়।

লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘কালকে মোবাইলে দেখলাম মামুনুল হক হুজুরের একটি ভিডিও। যে ভিডিওতে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে একটা রিসোর্টে গেছেন। সেখানে আমার প্রশ্ন হলো, যে অধিকাংশ সাংবাদিকরা তার কাবিননামা দেখতে চাচ্ছে। আপনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে? আপনি যে কাবিননামা দেখবেন আপনাকে এই অধিকার কি রাষ্ট্র দিয়েছে? কোনো সাংবাদিকদের যদি জানা থাকে এই ধরণের আইনসঙ্গত বিষয় তবে আমাকে জানান। আমি তো পুলিশে চাকরি করি। আমার এটা জানা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি যদি স্ত্রী ব্যতীত অন্য কাউকে নিয়ে যেতেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তিনি একজন আলেম মানুষ। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।’

এ ঘটনায় ৪ এপ্রিল এএসআই গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. মুহিদ উদ্দিন বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলমকে নির্দেশ দেন। 

পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম জানান, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ মে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

চাকরি হারানোর পর বুধবার (২৬ মে) কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে হ্যান্ড মাইক নিয়ে গোলাম রাব্বানীর বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি অবগত কিনা জানতে চাওয়া হলে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি জানার পর তাকে (গোলাম রাব্বানী) থানায় নেওয়া হয়েছিল। পরে আজ তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে দিনাজপুরে চলে গেছেন। 

রাজু আহমেদ/আরএআর