৫০ হাজার টাকা ধার করে রিফাতের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন তার মা

জন্মের সাত-আট মাস পর থেকেই চোখের সমস্যা দেখা দেয় রিফাতের। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। ইতোমধ্যে এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁ চোখটি তুলে ফেলে সেখানে পাথরের চোখ প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। বাঁ চোখটি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে ডান পাশের চোখটিও নষ্ট হয়ে যাবে রিফাতের।

এমনটাই বর্ণনা দিলেন রিফাতের মা সিরাজগঞ্জ সদর থানার খোকশাবাড়ি উত্তরপাড়া গ্রামের মো. হাবিবরের মেয়ে হাফিজা খাতুন।

হাফিজা অভাবের তাড়নায় স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার সংসারে চলে আসেন। কিন্তু এখানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন সাত বছরের শিশুসন্তান রিফাতকে নিয়ে। রিফাতের বাবা মো. মোতালেব শেখের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর থানার ফুলকোচা গ্রামে। দিনমজুর মোতালেব আয় করে সংসার চালাতে হিমশিম খান। এ কারণে স্ত্রী-সন্তানের খরচ বহন করতে পারেন না।

এদিকে হাফিজার বাবা হাবিবর পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। খুবই অল্প পুঁজি দিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। দিন শেষে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে পাঁচজনের সংসার চালান।

জানতে চাইলে রিফাতের মা হাফিজা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলের জন্মের পর থেকেই দুচোখে সমস্যা। চোখের সাদা পর্দার ওপর আবরণ পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে এক চোখ। অনেক চিকিৎসা করেও সারানো যায়নি। ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে পারেননি। মানুষের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টাকা ধার করে রিফাতের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাঁ পাশের চোখটি অস্ত্রোপচার করে পাথরের চোখ বসাতে হবে। তা না করলে ডান পাশের চোখটিও নষ্ট হয়ে যাবে। দুটি চোখই চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যাবে রিফাতের।

সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বিভিন্ন চক্ষু সার্জন দিয়ে রিফাতকে দেখানোর পর ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে এই ফুটফুটে শিশুকে। ছেলের চিকিৎসার জন্য হাফিজা সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানতাম না। আমি শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি উপজেলা অফিস থেকে যতটা সম্ভব শিশুটির জন্য আর্থিক সহযোগিতা করব। ঢাকার ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালে আমাদের শাখা আছে, সেখানেও বলে দেব যেন সহযোগিতা করে।

শুভ কুমার ঘোষ/এনএ