ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে দুর্বল বাঁধ ভেঙে ও উপচে খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জোয়ারের প্রবল স্রোতে পানিতে তলিয়ে গেছে নতুন নতুন গ্রাম। তাইতো দশহালিয়া গ্রামের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেমেছেন তিন হাজার মানুষ। 

রোববার (৩০ মে) সকাল থেকে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাঙা বাঁধ নির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা করছেন কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বাঁশ, মাটি, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছেন।  

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার (২৬ মে) ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ, কয়রা ও শাকবেড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি ৬-৭ ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে খুলনার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও পানি উন্নয়ন বো‌র্ডের জরাজীর্ণ বাঁধ উপ‌চে লোকালয় প্লা‌বিত হ‌য়। এ সময় জোয়ারের পানিতে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। 

পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় আটটি পয়েন্ট আটকাতে পারলেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া, পবনা এবং উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী নামক স্থান আটকাতে ব্যর্থ হয়। ফলে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরের জোয়ারে আরও ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে পাঁচটি স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামত করায় এখন সেসব স্থানে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার (২৮ মে) ভোর থেকে দুপুরের জোয়ারের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা বেড়িবাঁধ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেঁতুল তলারচর, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পদ্মপুকুর, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠের কোনার দুটি বেড়িবাঁধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেন ভুক্তভোগীরা।

শুক্রবার ও শনিবারের জোয়ারের পানিতে আবারও প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। পানির চাপে গ্র্যাজুয়েট গ্রাম ও বাগালি ইউনিয়নের কিছু অংশ নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার বিঘার মৎস্য ঘের, ফসলি জমি, বসতঘর, মসজিদ, দোকানঘর ও একটি খেয়াঘাট হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন গ্রামসহ মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। অবশেষে রোববার দশহালিয়ার বাঁধ মেরামতে নেমে পড়েছেন তিন সহস্রাধিক মানুষ।

উপজেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্য মতে, লোনা পানি প্রবেশ করায় ফসলি জমি, মৎস্য, গবাদি পশুসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে মৎস্য ঘের ডু‌বে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে। ২ হাজার ৫০‌টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ডু‌বে প্রায় ১৫ কো‌টি টাকার মৎস্যসম্পদ নষ্ট হ‌য়ে‌ছে।

গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বায়জিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোর থেকে দশালিয়া গ্রামে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে দশালিয়া, গোবিন্দপুরসহ ১৫টির অধিক গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। 

স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক হোসেন রবি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফজরের নামাজ আদায় করে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ এসে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন। হাজার হাজার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা এখানে এসেছেন। বাঁধ নির্মাণে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন,ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দশহালিয়ার দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। সেখান থেকে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। মহারাজপুর, কয়রা ও বাগালি ইউনিয়নের গ্রামগুলো তলিয়ে যায়। দশহালিয়া থেকে হোগলা অভিমুখের বাঁধ নির্মাণে বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আজ (রোববার) ভোর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছে। আজকের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। তবে আজ যদি না হয় তাহলে আগামীকাল আবারও বাঁধের কাজ শুরু হবে।  

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের কারণে ঢেউয়ের আঘাতে ২৬ মে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। সেই ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের সময় পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সকাল থেকে স্থানীয় মানুষরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছেন।

পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। 

মোহাম্মদ মিলন/এসপি