প্যাথলজি বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়

চিকিৎসক সংকটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে চিকিৎসকের ৫৭টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৭ জন। মাত্র ৩০ শতাংশ চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। ফলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) এবং আবাসিক সার্জনের (আরএস) মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ থাকলেও একটিতেও নেই জনবল। রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও সহকারি সার্জনের ১৭টি পদও শূন্য রয়েছে। শিশু, চর্ম ও যৌন, অর্থপেডিক্স ও প্যাথলজি বিভাগে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটী থেকে নবজাতকের চিকিৎসার জন্য এসেছেন মোছা. লুনা বেগম। তিনি জানান, বাইরে শিশু ডাক্তার দেখিয়ে এখানে বাচ্চাদের ভর্তি করে রেখেছি। বেশি অসুস্থ হলে আবারো বাইরে নেওয়া লাগবে। 

নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর মাজার এলাকার মারুফা আক্তার জানান, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ডাক্তার কম, রোগী বেশি। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। নীলফামারীতে কোনো ডাক্তার বেশি দিন থাকে না। ভালো ডাক্তার এলেই বদলি হয়ে চলে যায়।

সুটিপাড়া এলাকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমার কোমরে ব্যথা, হাঁটতে পারি না। আগে রংপুরে ডাক্তার দেখাইছি। টাকা পয়সার সমস্যা তাই আজ নীলফামারী হাসপাতালে এলাম। কিন্তু এখানে অর্থোপেডিক্সের কোনো ডাক্তার নেই।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অমল রায় জানান, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে প্রতি দিন বহু রোগী আসছে। চিকিৎসকদের ইনডোরে রোগী দেখে আবার বহির্বিভাগে রোগী দেখতে হয়। ফলে বহির্বিভাগের রোগীদের অপেক্ষা করছে হচ্ছে। রোগী বেশি থাকায় চিকিৎসকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না। সাপোর্টিং স্টাফ না থাকায় রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মেজবাহুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নীলফামারী হাসপাতালে ৫৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও পদায়ন আছে মাত্র ১৭ জন। আমরা কোনোভাবেই এতো কম সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, শিশু, চর্ম ও যৌন, প্যাথলজি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে ৬০ জন নার্সের পদ শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির ৬১টি পদের ৪৪টি পদই শূন্য। এতো কম সংখ্যক জনবল নিয়ে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি।

উল্লেখ্য, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতাল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত হয়। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো কার্যক্রম শুরু হয়। নীলফামারী জেলার ৬ উপজেলার মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রায় ৭০ হাজার, বহির্হিভাগে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

এসপি