শরিফুল ইসলাম ও তার মা ফাতেমা বেগম

লকডাউনের কারণে ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি ভ্যানচালক শরিফুল ইসলামের (৩৮)। তাই ছেলেকে দেখতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে রাজশাহীর বাঘায় আসছিলেন মা ফাতেমা বেগম (৬০)।

শরিফুল পরিবার নিয়ে বসবাস করেন উপজেলার নিশ্চিন্তপুরে শ্বশুর বাড়িতে। বাঘা-লালপুর সড়ক হয়ে সেখানেই গিয়ে উঠার কথা ছিল বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের। কিন্তু ফিরতে বিলম্ব হচ্ছিল মায়ের। তাই মায়ের সন্ধানে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শরিফুল ইসলাম। তখন বিকেল ৪টার কাছাকাছি। বাঘা পৌর সদরে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান এক নারী।
 
তার মাথা থেতলে যায়, দেখে চেনার উপায় ছিল না। শরিফুল ভেবেছিলেন এই মরদেহ তার মায়ের। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর তিনিও সেখানে যান। পুলিশকে জানান, এই মরদেহ তার মায়ের। মরদেহ তুলে রাখা হয় শরিফুলের ভ্যানে।

এ সময় তার মনে হয় মায়ের কাছে তো মোবাইল ফোন ছিল। সেই ফোনের হসিদ পেতে ফোন দেন তিনি। ও প্রান্ত থেকে ফোন তোলেন মা নিজেই। মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে জানতে চান মায়ের অবস্থান। মা জানান, বাসে পথেই আছেন। ততক্ষণে বাসটি নাটোরের বনপাড়া ছেড়ে আসে।

এই ঘটনা বিশ্বাস হচ্ছিল না শরিফুলের। পড়ে যান দ্বন্দ্বে। তার ভ্যানের ওপর তোলা মরদেহটি তাহলে কার? এর ঘণ্টা দুয়েক পর সত্যিই তার মা ফাতেমা বেগম এসে নামেন বাঘায়। মাকে পেয়ে শরিফুল ইসলাম জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। কিন্তু এর কারণ ঘুণাক্ষরেও ঠিক পাননি মা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান শরিফুল। জানান, ওই মরদেহ তার মায়ের নয়। মা মাত্র এসে পৌঁছেছেন। পরে পুলিশকে বুঝিয়ে মরদেহ ভ্যান থেকে নামিয়ে সেই ভ্যানে মাকে নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ান শরিফুল।

থানা থেকে বেরিয়ে আসার আগে শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মায়ের মৃত্যুর সংবাদে আসলে তার মাথা ঠিক ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাকে ফিরে পাওয়া তার কাছে দুঃখের মাঝে ঈদের খুশি।

এদিকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মরদেহের ঠাঁই হয় জব্দ করা আরেক ভ্যানে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেই মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন স্বজনরা।

তিনি হলেন- সমেনা বেগম (৩৮)। তিনি বাঘার গৌরাঙ্গপুর এলাকার সাহাদুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার (৩১ মে)  বিকেল ৪টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী মারা যান। প্রথমে ওই মরদেহ শরিফুল তার মায়ের বলে দাবি করেন। কিন্তু পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে ওই মরদেহ তার মায়ের নয়। অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মরদেহ থানায় ছিল।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বজনরা এসে সেই মরদেহ শনাক্ত করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত ১১টার দিকে মরদেহ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। এ নিয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান মোয়াজ্জেম হোসেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি