চিন্তা বাড়িয়েছে শহরের সীমিত আয়ের মানুষের

খুলনায় ১০ দিন আগে খুচরা বাজারে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। ফলে চিন্তা বাড়িয়েছে শহরের সীমিত আয়ের মানুষের। এ বছর দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। শুনেছি পেঁয়াজের ফলন এবার ভালো হয়েছে। তাহলে হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ কী? ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন।

সোনাডাঙ্গাস্থ কেসিসি কাঁচা বাজারের নিউ ফারাজী ভান্ডারের মালিক জানান, কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার ওঠানামা করছে। গেল মঙ্গলবার এ বাজার থেকে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা দরে পাইকারিতে পোঁয়াজ বিক্রি করেছেন। অথচ এখন তাকে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দেড় মাস ধরে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। ভারত থেকে আমদানি থাকলে বাজারমূল্য কম থাকত বলে তার দাবি।

এ বাজারের মেসার্স বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক মো. মালেক জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে গত দেড় মাস। এরপরও দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। দেশে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি গুদামজাত করে রাখছে। এ কারণে মোকামগুলোতে তেমন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যায়, তা দেশে সর্বত্র ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে যাচ্ছে।

নগরীর শেখপাড়া কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মাদ জানান, তিন দিন বাজার চড়া। ট্রাক টার্মিনাল থেকে তাকে চড়া দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তার দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুলনা সিটি গার্লস স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং লি. (করোনা প্রজেক্ট) পরিচালক শাহ মো. জিয়াউর রহমান স্বাধীন বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে। এ সময় দোকানপাট বন্ধ থাকবে। নিম্নবৃত্ত মানুষের আয়ের পথ বন্ধ থাকবে। করোনার কারণে হতদরিদ্রের পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থায় তেল-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকারে বেড়েছে।

খুলনা মহানগীর খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আসিফ বলেন, দুদিন আগে হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে যায়। গত ১০ দিনে দুই দফায় প্রকারভেদে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে দৌলতপুর পাইকারি বাজারে মনিটরিং করেছি। ব্যবসায়ীদের রশিদ চেক করেছি। মূলত পেঁয়াজ যেখান থেকে আনা হয়েছে, সেখানেই দাম বেশি। ফরিদপুর, পাকশি, কুষ্টিয়াসহ বেশ কিছু জেলা থেকে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। সেখানেই দাম বেশি।

খুলনা জেলা বাজার কর্মকর্তা আবদুস সালাম তরফদার বলেন, প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বুধবার দেখলাম পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশি কিছু পেঁয়াজ সংরক্ষণ এবং কিছু পেঁয়াজ বাজারজাতকরণের জন্য রাখা হয়। এখন সংরক্ষণ হয়ে গেছে। পেঁয়াজ বাজারে আসবে। করোনায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ না আসায় দাম কিছুটা বেড়েছে। শুধু দেশি পেঁয়াজই নয়, ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। এ বিষয় মনিটরিং করাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হচ্ছে।

মোহাম্মদ মিলন/এনএ