গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। সপ্তাজুড়ে বৃষ্টির দেখা না মেলায় খরার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

গাছে আমের গুটি শুকিয়ে ঝরার ফলে ফিকে হতে শুরু করেছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। এ বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষি অফিস বলছে- পানি সেচ ও পানি স্প্রে করতে হবে গাছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র। গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাপপ্রবাহের কারণে আমের বোটার আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে। বোটায় রস না থাকায় আম ঝরছে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, পবার হরিয়ান, শ্যামপুর, পারিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আম ঝরে পড়ার চিত্র দেখা গেছে। চাষীরা বলছেন- এ বছর বাগানগুলো আমের ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল। মুকুলগুলো ঝরে গিয়ে আবার নতুন করে পাতা বের হয়েছে। ফলে আমের গুটি টিকেটেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এই আম টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে গেছে—কারণ সপ্তার শুরুতে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছিল। শেষ ভাগে এসে শুরু হয়েছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। বৃষ্টিপাত না হলে আগামি সপ্তায় তীব্র তাপপ্রাবাহ বইবে, ফলে আরও আমের গুটি ঝরবে। এর মধ্যে রয়েছে কালবৈশাখী ঝড়।

পবার আম চাষি শামসুজ্জমান বলেন, প্রতি বছর কালবৈশাখী ঝড় হয়। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের আগে খরা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আমের জন্য। কারণ খরার কারণে আমের বোটা শুকিয়ে থাকে। হালকা বাতাস হলেই ঝরে পড়ে। আর ঝড় হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। তবে ঝরের কয়েকদিন আগে বৃষ্টিপাত হলে ততোটা ক্ষতি হয় না। 

পবার পারিলা গ্রামে ২ বিঘা আমের বাগান লিজ নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের। বাগানের ৫৫টি গাছ তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন তিনি। আম ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গাছে মুকুল এসেছিল মোটামুটি। মুকুল থেকে গুটিও হয়েছিল ভালই। কিন্তু খরার কারণে ঝরে যাচ্ছে গুটি। গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় আমের গাছ স্প্রে করা সম্ভব না। নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

তিনি বলেন, “মূলত আমারআমের ব্যবসায় আমার সংসার চলে। মৌসুমে আমের ব্যবসা করি; আর সারা বছর চলি। আমের মুকুল ও গুটি দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম-কিছু ঋণ পরিশোধ করব বলে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না শেষ পর্যন্ত কি হবে। বাগানে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। কোনোভাবে রক্ষা হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত হলে গুটি ঝরা রোধ হবে। না হলে বড় লোকসানে পড়ব।”

আমচাষী মনি মিঞা বলেন, “কয়েক দিন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। ছোট গাছগুলোতে পানি স্প্রে করছি। একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক নিয়ে দেখা যাচ্ছে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর বড় বড় গাছগুলোতে পানি স্প্রে করা সম্ভব না। সেগুলো ট্যাপ লাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে।”

এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “তাপপ্রবাহে আমের ক্ষতি হবে, গুটি ঝরবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যাবে। বৃষ্টিপাত হলে আমের গুটি ঝরা কমে যাবে। আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমের গুটি ঝরা রোধে গাছের গোড়ায় সেচ ও গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।”

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক এসএম গাউসুজ্জামান বলেন, “গেল কয়েক দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গতিবিধি দেখা গেছে রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারী তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৪ ও ২৩ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২১ এপ্রিল সর্বোচ্চ ছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং ২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।”

শাহিনুল আশিক/এসএমডব্লিউ