পাবনার সুজানগরে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার পর একটি শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্য ছুরিকাহত হয়েছেন। বুধবার (২ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের খয়রান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই পুলিশ সদস্যকে সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় রাতেই পুলিশ একজনকে ছুরিসহ আটক করেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন সুজানগর থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম ও কনস্টেবল মামুন।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর থানার চরতারাপুর ইউনিয়নের আরিয়া গোহাইলবাড়ি গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী গত বছর সাড়ে তিন বছরের এক মেয়ে মারজিয়াকে রেখে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর হাসান আলীর শ্বশুরপক্ষ মারজিয়াকে পার্শ্ববর্তী গ্রাম তারাবাড়িয়াতে নিয়ে যায়। এদিকে হাসান আলী মেয়েকে ফিরে পেতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে পরে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।

ইতোমধ্যে পাবনা সদর উপজেলার তারাবাড়িয়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে শাহাদত হোসেন তার ভাগ্নি মারজিয়াকে টাকার বিনিময়ে সুজানগর উপজেলার খয়রান গ্রামের আরশেদ ইসলাম মল্লিকের ছেলে নিঃসন্তান সাইফুল ইসলাম মল্লিকের কাছে দত্তক দেন। দেড় মাস ধরে সাইফুল ইসলাম মারজিয়াকে নিজের বাড়িতে রেখে যত্নসহ লালন-পালন করছিলেন।

এদিকে নিজ মেয়েকে ফিরে পেতে অনেকবার চেষ্টা করেও কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না বাবা হাসান। একপর্যায়ে আদালতের নিজের অনুকূলে রায়ের পর তিনি সুজানগর থানা পুলিশের সহযোগিতা চান। বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ দত্তক গ্রহণকারী খয়রান গ্রামের সাইফুল মল্লিকের বাড়িতে যায়।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সাইফুল মেয়েটির নানা জালাল উদ্দিন খান ও মেয়েটির মামা শাহাদৎ আলীকে খবর দেন। তারা সেখানে উপস্থিত হলে ব্যাপক বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির মামা শাহাদত উপস্থিত লোকজনকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করার চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত দুই পুলিশ সদস্য আহত হোন।

এ বিষয়ে সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরিসহ পাবনা সদর উপজেলার তারাবাড়িয়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে শাহাদতকে আটক করেছে। এদিকে সার্চ ওয়ারেন্টের ভিকটিম শিশুকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, শিশুটি এখন আমাদের হেফাজতেই রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। থানায় একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের দুই পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক জখম করেছে। তারা উভয়ই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। রাতেই আমিসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রাকিব হাসনাত/এনএ