‌‘থাকার ব্যবস্থা নাই, আমরা খুব কষ্টে আছি। বাড়ির অর্থেক ভাইঙ্গা গেছে। এইটুকুও যদি নদীতে চলে যায় মাথা গোঁজার কোনো জায়গা থাকব না। পদ্মায় এইটুকু না নিলে আমারা থাকবার পারমু। নদীতে বাড়ি ভাইঙ্গা গেলে কই যামু, কই থাকমু— এই চিন্তায় ঘুমাইতেও পারি না। আমাগো দুঃখ-কষ্ট দেখার মতো কেউ নাই। পদ্মা আমাগোর সব শেষ কইরা দিল।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে এভাবেই বলছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা হাবেজা বেগম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ে নদী ভাঙনে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা দিশেহারা। ভাঙনের ঝুঁকিতে নদীতীরবর্তী হাবেজা বেগমের মতো শতাধিক পরিবারের মানুষের এখন নির্ঘুম রাত কাটে। 

সরেজমিনে জানা যায়, ইয়াসের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি এবং কয়েক দিনের ঝোড়ো হাওয়ায় পদ্মা উত্তাল হয়ে পড়ে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকায় শুরু হয় ভাঙন। ইতোমধ্যে উপজেলার কুশিয়ারচর এলাকার নদীতীরবর্তী ১০ বাড়িসহ প্রায় ১৫ বিঘা ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে।

অন্যদিকে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অর্ধশত ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। এছাড়া ওই ধূলসুরা, বাহাদুরপুর, কোর্টকান্দি, মালুচি পদ্মার পাড় এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতীরবর্তী এলাকায় অনেকের বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে এবং অনেক গাছপালাও কেটে ফেলা হয়েছে।

কুশিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন বেপারি (৫০) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পদ্মা আমার বাড়ি-ঘর কেড়ে নিল। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে এখন আমি কোথায় যামু? কী করমু? নতুন করে ঘরবাড়ি তোলার মতো নিজের জায়গাও নাই। ঘর-দরজা অন্যের জায়গায় রাখছি, নিজের জায়গা না থাকায় খুব বেকায়দায় পড়েছি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন (৫৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, এইবারসহ দুবার বাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। একজন মানুষের দুবার নদীতে বাড়ি ভাঙলে কিছুই থাকে না। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি হারাইছি। অন্যের জায়গায় কোনোমতে ঘর তুলে আছি। পদ্মার পাড়ে স্থায়ী একটি বাঁধের জন্য সরকারের দৃষ্টি কমনা করেন তিনি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ১৩ মৌজার মধ্যে ১২টি নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকি একটি মৌজার অর্ধেকও পদ্মায় গ্রাস করেছে। নদী ভাঙন ঝুঁকি নিয়েই তীরবর্তী মানুষ বসবাস করছে। এক সপ্তাহে ১০টি বসতবাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং আরও অর্ধশত ঘর-বাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, ইয়াসের কারণে মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে অসময়ে হরিরামপুর উপজেলার ধূলসুরা, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ৪ মাসের মধ্যে বাহাদুরপুর থেকে কাঞ্চনপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার পদ্মাপাড় এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

এমএসআর